রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের সাত নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, ভোলা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশের গুলিতে নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিএনপি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের মোড় হয়ে বাজার অতিক্রম করে। এরপর টাকোয়া মসজিদের সামনে সড়কে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশ চলাকালে পুলিশ বাধা দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে প্রথমে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ সময়ে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে পুলিশ ফাঁকা গুলি করে। এরপর বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে থানায় চলে আসে। এরপর রংপুর থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এসে লাঠিচার্জ আর গুলি শুরু করে।
সংঘর্ষে পুলিশের এসআই সালামসহ পাঁচ পুলিশ, দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধি সুজন আহমেদ মানবজমিনের প্রতিনিধি আব্দুল বারী স্বপনসহ চার সাংবাদিক এবং অর্ধশতাধিক বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন। এছাড়া আহতদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান মাবু, সাধারণ সম্পাদক আখিরুজ্জামান শিরন, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহা, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন লিজু। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু অভিযোগ করে বলেন, ‘গত বুধবার থানার ওসির সঙ্গে কথা হয়েছিল, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করবো। কিন্তু সমাবেশ চলাকালে পুলিশ অতর্কিত হামলা করেছে। আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।’ এছাড়া সাত নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বিএনপি ও ছাত্রদলের সাত নেতাকে আটক করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন—বিএনপি নেতা মাহবুব আসিফ, ছাত্রদল নেতা সিন্দিদ, অয়ন ও নয়ন। অন্য তিন জনের নাম জানা যায়নি।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান মিলন জানান, বিএনপি ও ছাত্রদলের সাত নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল জানান, বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের নামে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ২২ পুলিশকে আহত করেছে তারা। দফায় দফায় পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নাম বলতে রাজি হননি ওসি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান বলেন, ‘বিএনপি নেতা-কর্মীরা গুজব ছড়ায়, তাদের ওপর পুলিশ হামলা করে কয়েক নেতাকে আটকের চেষ্টা করছে। এসব কথা বলে তারা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে ওসি দুলাল হোসেনসহ ২২ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় পুলিশের কর্তব্যে বাধা দিলে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।’