‘মা ফিরেছে লাশ হয়ে, বাবা তো ফিরলো না’

কৃষক হরি কিশোরের দুই ছেলে। বড় ছেলে উজ্জ্বল স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলে অজয় রায় দশম শ্রেণিতে পড়ছে। দুই সন্তানের সফলতার জন্য প্রার্থনা করতে পরিবারের আরও চার সদস্যকে নিয়ে হরি কিশোর ও তার স্ত্রী কণিকা মহালয়ার পূজা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু চিরচেনা আর শান্ত করতোয়ায় স্বজনদের হারাতে হবে, তা কে জানতো?

প্রায় ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কণিকার মরদেহ মিলেছে। কিন্তু হরি কিশোর ও তার পরিবারের আরও চার সদস্য এখনও নিখোঁজ। মায়ের মরদেহ উদ্ধারের পর ছেলে উজ্জ্বল কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘মা ফিরেছে লাশ হয়ে, বাবা তো ফিরলো না! আমরা দুই ভাই এখন কীভাবে বাঁচবো?’

ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী ছিল নৌকায়, নদীর পাড়ে আহাজারি

পঞ্চগড়ের কয়েকটি গ্রামের স্বজনহারাদের মুখেও এখন উজ্জ্বলের এমন প্রশ্ন। কারণ সময় যত গড়াচ্ছে স্বজনদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই ক্ষীণ হচ্ছে। অনেকের মনে আশঙ্কা-লাশটাও বুঝি আর মিলবে না।

‘দেড় মাস আগে বিয়ে, করতোয়ায় বিচ্ছেদ’

উজ্জ্বলের মা মনিকার মরদেহ উদ্ধার হয়েছে করতোয়ার জলসীমা পেরিয়ে দিনাজপুরের খানসামার ঝাড়বাড়িতে আত্রাইয়ের প্রবাহে। বিকালে আউলিয়ার ঘাটই উদ্ধার হয় তার একমাত্র ফুফু পারুলের মরদেহ। এখনও নিখোঁজ উজ্জ্বলের বাবা হরি কিশোর, খালা মনিকা, নানা সরেন্দ্র নাথ এবং মামার শ্বশুর নিখিল চন্দ্র। এরা সবাই পঞ্জগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের বটতলি গ্রামের বাসিন্দা। একই গ্রামের জগদীশ (২৭) ও তার ভাতিজা সেন্টু (২২) নৌকাডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন। 

বিকালে উজ্জ্বলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘দুপুরে মাকে পাওয়ার পর বিকালে পিসিকে (পারুল) উদ্ধার করা হয়েছে। শুনেছি আমার মামার শ্বশুর নিখিল চন্দ্রের লাশও পাওয়া গেছে। আমরা এত লাশের ভার কেমন করে বইবো’, কান্নায় আর কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। 

নৌকাডুবির দায় কার?

দুর্ঘটনা তদন্তে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, উদ্ধার মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। অনেকে নিজেদের স্বজনদের মরদেহ খুঁজে পাওয়ার পর আমাদেরকে অবহিত করছেন। মরদেহ সৎকারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাথাপিছু ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

নারী-শিশুসহ ২৪ জনের লাশ উদ্ধার, ধর্মসভায় যাচ্ছিলেন তারা

রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ৮০ জনের বেশি যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপর পাড়ে) যাচ্ছিলেন। তবে মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন। ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়।