পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৩০ জনের বেশি। ডুবে যাওয়া নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের মতো যাত্রী তোলা হয়েছিল। মূলত ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃতদের মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষ রয়েছেন। ঘটনাস্থলে ১৭ জনের এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।
আউলিয়া ঘাট এলাকায় বিকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে ঝরে গেছে ২৪ জনের প্রাণ। নদীর পাড় থেকে ভেসে আসছে স্বজনদের আহাজারির শব্দ। কাছে যেতেই দেখা গেলো স্বজনদের কান্নার রোল। তাদের কান্না আশপাশের পরিবেশ ভারী করে তুলেছিল।
মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ৮০ জনের বেশি যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অপরপাড়ে) যাচ্ছিলেন। মাঝনদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন। ঘটনাস্থলেই ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন ১০ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর সাত জনের মৃত্যু হয়। এখনও ৩০ জনের বেশি নিখোঁজ রয়েছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও ধনেশ চন্দ্র জানান, সকাল থেকে ঘাটে মানুষের ভিড় ছিল। ছোট ছোট নৌকাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করেছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় ৮০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ নারী-শিশু পানিতে ডুবে যান। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করেন। পরে জেলা, উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে সবাই এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। নদীর পাড়ে নারী-শিশুসহ ১৭ জনের লাশ রয়েছে। এছাড়া উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে সাত জনের মৃত্যু হয়।
বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম রাজিউল করিম রাজু বলেন, ‘এখানে ১০ জনকে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে নারী ও শিশুসহ সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিন জনের চিকিৎসা চলছে।’
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী বলেন, ‘নৌকাডুবিতে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষের লাশ পেয়েছি আমরা।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এখানে এ পর্যন্ত ১৬ জন নিখোঁজের তালিকা করা হয়েছে। উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। সবার তালিকা পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রকৃতপক্ষে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন। লাশ শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নৌকাটিতে দ্বিগুণ যাত্রী ছিল। তবে ফায়ার সার্ভিসের অভিযান শেষ না হলে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা জানানো যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের পরিবারকে ২০ হাজার করে এবং আহতদের প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। হতাহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আহতদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’