ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতানোর অভিযোগ অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানোর ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে।

বুধবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলার বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার নামা একটি মিষ্টির দোকানে এমন প্রতারণাকালে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। পরে ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে স্থানীয় দুই ইউপি সদস্যের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অভিযুক্ত আব্দুল হাইয়ের দাবি, তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

উপজেলা শহরের থানা মোড় এলাকার ‘বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারের’ মালিক মিন্টু মিয়া দাবি করেন, ‘রৌমারী ইউএনও’র কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আব্দুল হাই নিজেকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরিচয়ে আমার কাছে ৩৫ হাজার টাকা দাবি করেন (মোবাইল কলে)। এই টাকা দিতে না পারলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুই বছরের জেল ও দোকান সিলগালা করার ভয় দেখান। এই সময় দাবি করা টাকা নগদ দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ না করে বিকাশের মাধ্যমে দিতে বলেন। পরে স্থানীয় একটি বিকাশের দোকান থেকে তার দেওয়া ০১৯৩৩২১২১২০ নম্বরে (নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে) ৩৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়।’

ওই ব্যবসায়ী আরও দাবি করেন, ‘ওই অফিস সহকারী বুধবার রাত ৮টার দিকে আমার অনুপস্থিতিতে দোকানে আসেন এবং দোকান অপরিষ্কার ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ত্রুটির কথা বলে কর্মচারীদেরকে দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করেন। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি, তিনি উপজেলা গেটের সামনে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে একটি দোকানে অবস্থান করছেন।’

‘সেখানে গিয়ে দোকান বন্ধ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেটের হুকুমে এই কাজ করেছি। বিষয়টি সন্দেহ হলে ম্যাজিস্ট্রেটের নম্বরে ফোন দিতে বললে তিনি তা না করে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে উপস্থিত লোকজন তাকে আটক করেন। পরে ওই অফিস সহকারী পুলিশি ঝামেলা এড়াতে আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তখন রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রবিউল করিম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রবিউল ইসলাম রানা তাকে নিজেদের জিম্মায় নেন। পরে বৃহস্পতিবার ৩৫ হাজার টাকা ফেরত দেন ওই অফিস সহকারী।’

‘ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডারের’ মালিক সুজন মিয়ার দাবি, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন আব্দুল হাই। পরে উপায় না পেয়ে ৩০ হাজার টাকা তাকে দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজনের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে। পরে সোমবারের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে দুজন ইউপি সদস্য তাকে জিম্মায় নেন।’

ইউপি সদস্য রবিউল করিম বলেন, ‘সবকিছু জানাজানির পর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান অফিস সহকারী আব্দুল হাই। দুদিনের মধ্যে প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।’

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অপর ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম রানা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি শুনি, আব্দুল হাই কোনও ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের কথা বলে দেওয়ার জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। এর আগে কে যেন ফোনে ভয় দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা তখন আব্দুল হাইকে ওই টাকা গ্রহীতা হিসেবে দাবি করেন। পরে মধ্যস্থতার মাধ্যমে আব্দুল হাইকে মুক্ত করা হয়।’ তবে তিনি কোনও টাকা নিয়েছেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলতে পারেননি এই ইউপি সদস্য।

দুটি মিষ্টির দোকানে যাওয়ার কথা স্বীকার করে আব্দুল হাই দাবি করেন, ‘এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটানো হয়েছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পরিচয় দিয়ে আমাকে ফোন করে ওই মিষ্টির দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়। ফোন পেয়ে ওই দুই দোকানে যাই। এই সময় লোকজন জড়ো হয়ে আমাকে আটক করে এবং আমি চাঁদা দাবি করেছি বলে অভিযোগ তোলেন।’

ব্যবসায়ীদেরকে টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দাবি করেন, ‘পরে চাপের মুখে তাদের টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেই। পরদিন বৃহস্পতিবার টাকা দেওয়া হয়েছে।’ তবে কত টাকা ফেরত দিয়েছেন তা বলতে রাজি হননি।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ পূবন আখতার বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। এই বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’