শয্যা বাড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না, রোগীদের দুর্ভোগ

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেকে ৩১ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হলেও এখনও সেবা মিলছে ৩১ শয্যার হাসপাতালের। সেবাদানের জন্য ৫০ শয্যার ভবন নির্মাণ করা হলেও প্রশাসনিক অনুমোদন জটিলতায় হাসপাতালটি আলোর মুখ দেখেনি।

আর এই অনুমোদন জটিলতার কারণে সেবা নিতে এসে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘোড়াঘাট উপজেলাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি উপজেলার নাগরিকদের।

জানা যায়, ১৯৬৫ সালে এই উপজেলার নাগরিকদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে স্থাপন করা হয় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। বৃহৎ নাগরিকের উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চার বছর আগে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করে মালিথা ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

২০১৮ সালের ১০ মার্চ নির্মিত নতুন ভবন হস্তান্তর করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। হস্তান্তরপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার চার বছর পেরোলেও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নামক খেলায় আজও সেবার মান ৩১ শয্যাতেই রয়ে গেছে হাসপাতালটিতে।

৫০ শয্যাতে উন্নীতকরণের প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য হাসপাতালটির কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার লিখিত আবেদন করেছেন। তাতেও কোনও কাজ হয়নি।

ঘোড়াঘাট উপজেলার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮২ হাজার। এই বৃহৎ জনসংখ্যার জন্য হাসপাতালটিতে শয্যা মাত্র ৩১টি। এ ছাড়া নিকটবর্তী হওয়ায় পাশ্ববর্তী গোবিন্দগঞ্জ, পাঁচবিবি ও পলাশবাড়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার লোক চিকিৎসাসেবা নিতে আসে এই হাসপাতালে। এতে শয্যাসংখ্যা ও জনবল সংকটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সেবা নিতে আসা অধিকাংশ ব্যক্তিকে। একইভাবে প্রতিদিন সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের।

হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, এই হাসপাতালে প্রতিদিন ৭৫৭ জন রোগী সেবা গ্রহণ করে। তার মধ্যে বহির্বিভাগে প্রতিদিন সেবা নেয় ৫০০ এবং জরুরি বিভাগে ৭০ জন।

এ ছাড়া হাসপাতালটির ল্যাবরেটরিতে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৫০ জন রোগী এবং অন্তর্বিভাগে সেবা নেয় ৩৫ জন রোগী। হাসপাতালটিতে শয্যা ৩১ হলেও, অন্তর্বিভাগে প্রতিদিন সেবা নেয় প্রায় ৩৫ জন। অনেক সময় সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৪০ জনে।

এমন পরিস্থিতিতে সেবা নিতে আসা রোগীদের মেঝেতে কম্বল-কাঁথা বিছিয়ে থাকতে হয়। ফলে রোগীর পাশাপাশি চিকিৎসক এবং রোগীর সঙ্গে থাকা পরিবারের লোকজনকে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ ছাড়া ৩১ জনের বেশি অতিরিক্ত রোগীকে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা নেই সেখানে।

সরেজমিন হাসপাতালে দেখা যায়, কাউন্টারে টিকিট সংগ্রহ করতে সারিবদ্ধ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন বয়সের প্রায় এক থেকে দেড় শ জন রোগী। দ্বিতীয় তলায় পৃথক তিনটি রুমে চিকিৎসককে দেখাতে বেশ কয়েকটি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ৬০ থেকে ৭০ রোগী। এদের অধিকাংশই নারী। এ ছাড়া হাসপাতালটির ল্যাবরেটরির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ১০ থেকে ১৫ জন রোগী।

হাসপাতালটির একজন গাইনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন মৌসুমী আক্তার নামের এক নারী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাঝে মাঝেই আমি ও আমার পরিবারের লোকজন এই হাসপাতালে আসি সেবা নিতে আসি। শত শত রোগীর ভিড়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই হাসপাতালে রোগীর ভিড়ে সিরিয়াল পাওয়াই একটি যুদ্ধ।’

হাসপাতালে ওষুধ নেওয়ার জন্য আসা রফিকুল ইসলাম নামের এক যুবক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক মাস আগে আমার দাদাকে ভর্তি করাতে নিয়ে এসেছিলাম। এসে দেখি কোনও সিট ফাঁকা নেই। ওয়ার্ড বয় মেঝেতে বিছানা করে দিচ্ছে। পরে আমার দাদাকে দিনাজপুর হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়েছি।’

ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি যোগদানের পর থেকে একাধিকবার মন্ত্রণালয়ে ৫০ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি। তবে কোনও সমাধান পাইনি। সেবাগ্রহীতাদের চাপে ৩১ শয্যার ভবনে সেবা প্রদান বিঘ্নিত হওয়ায় আমরা নবনির্মিত ভবনে দাফতরিক কার্যক্রম চালু করেছি।

জরুরি মুহূর্তে অতিরিক্ত রোগীকে ভর্তি করিয়ে নিতে আমরা বাধ্য হই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীরা নিরুপায় হয়ে মেঝেতেই থাকে। ৫০ শয্যাটি চালু করা গেলে এই হাসপাতালে সেবার মান আরও বাড়বে। এতে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি কমে যাবে।’