পা দিয়ে লিখে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে মানিক

জন্মগতভাবেই দুই হাত নেই মা‌নিক রহমানের। কু‌ড়িগ্রা‌মের ফুলবাড়ী উপ‌জেলার এই কি‌শোর পা‌ দি‌য়ে লি‌খে এবার এসএস‌সি পরীক্ষা‌য় জি‌পিএ-৫ অর্জন ক‌রে‌ছে। সোমবার (২৮ নভেম্বর) ফল প্রকাশ হওয়ার পর পা দি‌য়েই ল‌্যাপট‌প চা‌লি‌য়ে নি‌জের ফলাফল দে‌খেন। নি‌জের সফলতায় উচ্ছ্বসিত মেধাবী এই শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগ থে‌কে গো‌ল্ডেন এ প্লাস অর্জন ক‌রে‌ছে। তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ১২৪২।

মানিক রহমান কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা গ্রামের ওষুধ ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও শিক্ষক মরিয়ম বেগমের ছেলে। এ বছর ফুলবাড়ীর জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ফুলবাড়ী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (পাইলট) কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নি‌য়ে‌ছিল সে। তার এ সফলতায় বাবা-মা ও শিক্ষকরা আন‌ন্দিত।

নিজেই নিজের ফল দেখে মানিক

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার দুই হাত না থাকলেও দুই পা দিয়ে নিজের প্রয়োজনীয় সব কাজ করতে পারদর্শী হয়ে উঠেছে। পা দিয়েই কম্পিউটার চালানো, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ মোবাইল ফোনও অপারেট করে। এভাবে গড়ে উঠতে মা মরিয়ম বেগম তাকে সহায়তা করেছে বলে জানান বাবা মিজানুর রহমান।

মা মরিয়ম ও বাবা মিজানুর বলেন, ‘আমাদের দুই ছেলে। মানিক বড়। সে প্রতিবন্ধী, এটা আমরা মনে করি না। জন্ম থেকেই তার দুই হাত না থাকলেও ছোট থেকে আমরা তাকে পা দিয়ে লেখার অভ্যাস করিয়েছি। এভাবে লিখে অন্যদের চেয়ে পিএসসি ও জেএসসির পাশাপা‌শি এবা‌রের এসএস‌সি‌তেও ভালো রেজাল্ট করেছে। এটা আমাদের গর্ব। সবাই আমাদের ছেলের জন্য দোয়া করবেন, সে যেন সুস্থ-সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে, স্বাবলম্বী হতে পারে। সে যেন তার স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে।’

manik1

মানিক রহমান বলে, ‘আমার দুই হাত না থাকলেও আল্লাহ রহমতে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমি এর আগে জেএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পেয়েছিলাম।’

এই কি‌শোর আরও বলে, ‘আমি এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভা‌গে পড়া‌শোনা ক‌রে ভালো রেজাল্ট করতে চাই। আমার ইচ্ছা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে প‌ড়ে ভবিষ্যতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। আমি যে‌ন নি‌জের ও বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’

জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও মানিক রহমান ভালো ফলাফল করায় আমরা মুগ্ধ। সে জীবনে অনেক বড় হোক- এই দোয়াই করি।’