রংপুরে ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে মাদকাসক্ত, বিবাহিত, অছাত্র ও বিতর্কিতদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। নেতা নির্বাচনে ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টায় পীরগাছা উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
পীরগাছা উপজেলা ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের জীবন-বৃত্তান্ত নেওয়া শেষে ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বই দুটি থেকে প্রশ্ন করা হয়। ৩০ মিনিটের ৫০ নম্বরের এ পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৪ পদপ্রত্যাশী। এর মধ্যে উপজেলা ছাত্রলীগের জন্য ২৭ জন ও কলেজ ছাত্রলীগের জন্য সাত জন অংশ নেন।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘যারা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দেবেন তাদের হতে হবে মেধাবী। অনেকে বঙ্গবন্ধুর জীবন-আদর্শ সম্পর্কে জানেন না। কিন্তু তারাও নেতা নির্বাচিত হন। নেতা নির্বাচনের জন্য পরীক্ষা নেওয়া হলে তারা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে পারবেন, শিখতে পারবেন। ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বই থেকে পদপ্রত্যাশীদের পরীক্ষা নিচ্ছি আমরা। এই পরীক্ষার মাধ্যমে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো। মাদক ও বিতর্কমুক্তসহ মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা নির্বাচনে এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রলীগের এক দায়িত্বশীল নেতা বলেছেন, ‘রংপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজের মোট ২৩টি ইউনিটের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে কাউনিয়া উপজেলা ও কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে নেতা নির্বাচনে নেওয়া হয় লিখিত পরীক্ষা। এরই ধারাবাহিকতায় পীরগাছা উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচনে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুরসহ বাকি উপজেলাগুলোয় সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেও একই পদ্ধতিকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।’
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম তানিম আহসান চপল বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমে কাউনিয়া উপজেলা ও কলেজ শাখার সাংগঠনিক সম্মেলন হয়। পরে পীরগাছা উপজেলা ও কলেজ শাখার হচ্ছে। তবে জেলার সব ইউনিটে পরীক্ষা নিয়ে নেতৃত্ব বাছাই করবো আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছি। নির্ধারিত বই দুটি পড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশনা অনেকে পালন করছিলেন না। তাই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’
এ ব্যাপারে পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লা আলম মাহমুদ মিলন বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বর্তমানে যেভাবে নেতৃত্ব নির্বাচন হচ্ছে তা সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। ছাত্রলীগের নেতাদের সার্বিকভাবে মেধাবী হতে হবে। বিষয়টি জেলা ছাত্রলীগ অনুসরণ করছে। সারা দেশে এ পদ্ধতি গ্রহণ করলে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসবেন মেধাবীরা।’
এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ জানিয়ে সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তালহা বিপ্লব বলেন, ‘অতীতে ছাত্রলীগের নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। বিবাহিত, মাদকাসক্ত, অছাত্র ও বিতর্কিতরা নেতৃত্বে ছিল। সংগঠনের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য শুদ্ধি অভিযানে মাদকাসক্ত ও বিতর্কিতদের বাদ দেওয়াসহ মেধাবী নেতৃত্ব নির্বাচনে জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’
ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে আরও সতর্ক হওয়া উচিত উল্লেখ করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম বলেন, ‘কোনও অছাত্র, মাদকসেবী, বিবাহিত ব্যক্তি নেতৃত্বে থাকা উচিত নয়। পরীক্ষার মাধ্যমে নেতা নির্বাচন বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের একটি ভালো উদ্যোগ। এভাবে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। কোনও ছাত্র যাতে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে বিতর্কিত কিছু করতে না পারে সে বিষয়ে নজর রাখা হবে।’