পঞ্চগড়ে নিহত বিএনপি নেতা বাইপাস রোগী ছিলেন: পুলিশ সুপার

পঞ্চগড়ে পুলিশের লাঠিচার্জে এক নেতা মারা গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে বিএনপির পক্ষ থেকে। তবে পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। এই বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দাবি করেছেন, ‘পুলিশের পিটুনিতে নিহত হওয়ার অভিযোগ করা হচ্ছে, এরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। বিএনপিকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি করার কথা বলা হয়। জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাভাবিকভাবেই আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করি। বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি না করে লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে মিছিল করে এবং পুলিশের নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে ভাঙচুর করে। পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে।’

তিনি আরও দাবি করেন, ‘যেহেতু পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এবং রাস্তায় ভাঙচুর করা হয়েছে- এ সময় পুলিশ জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। এতে বিএনপির ২০/২৫ জন এবং পুলিশের ১০/১২ জন আহত হয়। আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি মূলত বাইপাস রোগী। হৃদরোগজনিত কারণে মারা গেছেন। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। আগামীকাল তার ময়নাতদন্ত করা হবে। আপাতত কাউকে আটক করা হয়নি। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর আক্রমণ, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির কারণে মামলা করা হবে।’

শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) নিজ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার এ দাবি করেন।

clash1

পুলিশ, বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১০ দফা দাবিতে পঞ্চগড় শহরের পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিল শুরু করার আগেই পুলিশ মিছিলে বাঁধা দেয়। বাধা ভেঙে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপসহ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। এক থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ায় পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

বিএনপি নেতা-কর্মীরাও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় লোকজন দোকানপাট বন্ধ করে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শহরের প্রধান সড়ক ও দোকানপাট বন্ধ ছিল। সাইকেল, রিকশাভ্যান চললেও অন্যকোনও যানবাহন চলাচল করেনি। অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

clash2

নিহত বিএনপি নেতার নাম আবদুর রশিদ আরেফিন (৫০)। তার বাড়ি জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায়। তিনি ওই এলাকার খোরশেদ মুহুরীর ছেলে। ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং বর্তমানে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। বর্তমানে লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে রয়েছে।

বিএনপির দাবি, পুলিশের লাঠির আঘাতে আবদুর রশিদ আরেফিন, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান বাবুসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। নেতাকর্মীরা আহতদের উদ্ধার করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তৌফিক আহামেদ জানান, আরেফিন নামে এক ব্যক্তির লাশ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা যান। তবে কীভাবে বা কী কারণে মারা গেছেন তা ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাবে না।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু দাবি করেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে গণমিছিল শুরু করেছিল। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। তারা কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুড়ে আমাদের ছত্রভঙ্গ করে আমাদের ওপর লাঠিচার্জ করতে থাকে। বিএনপির একজন নেতা নিহত ও প্রায় ২০০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।