ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দুই মামলা, আসামি পাঁচ শতাধিক

নির্বাচনের ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের বিরল পৌরসভা ও রাজারামপুর ইউনিয়নের দুটি কেন্দ্রে দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে। দুই মামলায় অজ্ঞাত প্রায় সাড়ে পাঁচশ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মামলার বিষয়টি জানিয়েছেন বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল হাসান। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। দুই মামলায় অজ্ঞাত প্রায় সাড়ে পাঁচশ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।’

মামলা দুটির বাদী হলেন বিরল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ এবং বিরল উপজেলার রাজারামপুর ইউনিয়নের কানাইবাড়ী কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সালেহীন আহমেদ।

বিরল থানা সূত্রে জানা যায়, বিরলের ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে হামলার ঘটনায় করা মামলায় অজ্ঞাত দেড়শ জনকে আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি কানাইবাড়ী কেন্দ্রে হামলার ঘটনায় করা মামলায় ৪০০ জনকে আসামি হয়েছে। মামলায় ভোটকেন্দ্রে সরকারি কাজে বাধাদান, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের চেষ্টা ও ভোটের সরঞ্জামাদি ছিনতাই চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে ওই দুটি কেন্দ্রে হামলা চালান পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকরা। ইটপাটকেল দিয়ে হামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং সরকারি মালামাল অক্ষত রাখতে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কানাইবাড়ী কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পর কিছু লোকজন কাগজপত্রে ভুল আছে দাবি করে কেন্দ্র ঘেরাও করেন। এ সময় তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ও সরকারি মালামাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার গেলে তাদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, তাদের গাড়ি ও সরকারি মালামাল নিয়ে ফেরত যায় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।

একইদিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিরল পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পর হট্টগোল শুরু করে পরাজিত প্রার্থীদের সমর্থকরা। তারা ইভিএম মেশিন থেকে পাওয়া কপি দেখতে চেয়ে কেন্দ্র থেকে নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিতদের কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধা দেন। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে করে নির্বাচনি সরঞ্জাম নিয়ে আসার চেষ্টা করলে প্রার্থীর সমর্থকরা ইটপাটকেল ছোড়েন। এতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসানের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। সেইসঙ্গে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ, পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ পাঁচ জন আহত হন।

দিনাজপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘দুটি কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ব্রহ্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আবদুল লতিফ আহত হয়েছেন। এছাড়া পুলিশ ও আনসার সদস্যরা আহত হয়েছেন। নির্বাচনি সরঞ্জামাদি ঠিক রয়েছে। হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মামলা করেছেন।’

দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জিন্নাহ আল মামুন বলেন, ‘দুটি ঘটনাই ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। দুটি ঘটনায় পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ কয়েকজন আহত হন। আমরা একটি কেন্দ্রে সরকারি মালামাল রক্ষা ও নিজেদের নিরাপত্তায় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছি।’

এদিকে, বিরল পৌরসভায় মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবুজার সিদ্দিক সাগর নির্বাচিত হওয়ায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়নি। ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪ জন ও তিনটি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ১০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজারামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন দুজন। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ৩০ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।