১৭তম স্ত্রীকে হত্যায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড, খালাস পেলেন ১৮তম স্ত্রী

যৌতুকের জন্য রংপুরের পীরগঞ্জে ১৭তম স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে আবু সাঈদ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় তার ১৮তম স্ত্রী তাছকিরা বেগমকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার ১৬ বছর পর বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক মো. আলী আহমেদ এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আবু সাঈদ পীরগঞ্জ উপজেলার পালগঢ় গ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে। রায় ঘোষণার সময় আবু সাঈদ পলাতক ছিলেন। মামলা চলাকালীন জামিন নিয়ে আর আদালতে হাজির হননি তিনি।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে একই উপজেলার অনন্তরামপুর গ্রামের দিনমজুর তাজিম উদ্দিনের মেয়ে তানজিনা খাতুনের সঙ্গে আবু সাঈদের বিয়ে হয়। তানজিনা ছিলেন আবু সাঈদের ১৭তম স্ত্রী। বিয়ের কিছুদিন পর তার কাছে ২৫ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন। এজন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন সাঈদ। পরে তানজিনার বাবা গরু বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দেন।

কয়েক মাস পর তাছকিরা বেগম নামে আরও এক নারীকে ১৮তম বিয়ে করেন সাঈদ। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তানজিনার কাছে যৌতুকের ১৫ হাজার টাকা দাবি করেন। যৌতুক দিতে অস্বীকার করলে নির্যাতন করা হয়।

এসবের মধ্যে ২০০৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে ১৫ হাজার টাকা যৌতুকের দাবিতে তানজিনাকে পিটিয়ে হত্যা করেন সাঈদ। এতে ১৮তম স্ত্রী তাকে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে তানজিনার লাশ পাশের ধানক্ষেতে ফেলে পালিয়ে যান সাঈদ। ঘটনার পরদিন ৯ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ থানায় সাঈদ ও তার ১৮তম স্ত্রীকে আসামি করে মামলা করেন তানজিনার বাবা তাজিম উদ্দিন। তদ্ন্ত শেষে ওই বছরের ১৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিয়াউল হক আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। ৩০ জুলাই মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি তাজিবুর রহমান লাইজু বলেন, ‘আবু সাঈদ যৌতুকলোভী ছিলেন। এজন্য একের পর এক বিয়ে করেছিলেন। ১৫ জনের সাক্ষ্য ও জেরা শেষে যৌতুকের টাকার দাবিতে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত হয়। পরে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে সাজা কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে পুলিশ—এটি আমাদের প্রত্যাশা।’

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, ‘আসামির একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত বলে মনে করেন আদালত। সে কারণে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’