ভাষাসৈনিকদের নাম জানলেও শহীদ মিনার চেনে না শিশু শিক্ষার্থীরা

নীলফামারীতে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য চলছে নানা আয়োজন। কিন্তু এখানকার কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা জানে না শহীদ দিবস আর শহীদ মিনার কী। পাঠ্যবইয়ে তারা সালাম, বরকত, রফিক, শফিক ও জব্বারের নাম জানলেও জানে না এরা কারা। মহান ভাষা আন্দোলনের এ দিনটিকে তারা অন্য দিনের মতোই ছুটির দিন মনে করে।

একুশ ফেব্রুয়ারি নিয়ে কথা হয় সদর উপজেলার রামনগর ইউনিয়নের রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিমা আকতার, বৃষ্টি আকতার, আবু শামিমের সঙ্গে।

তারা বলে, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। স্যাররা শ্রেণিকক্ষে বলে দেন ২১ ফেব্রুয়ারি স্কুল বন্ধ থাকবে। তাই আমরাও ওই দিন আর স্কুলে আসি না।’

বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয় শহীদ মিনার নেই। এই দিন এলে গ্রামের যুবসমাজ বাঁশ-কাঠ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে ভাষাশহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে। সেখানে গিয়ে শিশুরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তাদের আনন্দ ওই পর্যন্ত। কিন্তু এর তাৎপর্য ও মর্মকথা জানে না তারা। আবার কোনও কোনও বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকাও অর্ধনমিত করে উত্তোলন করা হয় না।

জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১ হাজার ৮৪টি। এর মধ্যে সদরে ২০৭, ডোমারে ১৫৮, ডিমলায় ২১৭, জলঢাকায় ২৪৯, কিশোরগঞ্জে ১৭৫ ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৭৮টি। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার।

সদরের বাহালীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী তিশা আকতার বলে, ‌‘বই পড়ে ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে জানতে পারি। কিন্তু শহীদ মিনার না থাকায় অমর একুশে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে পারি না।’

তিশার মতো অনেক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন সম্পর্কেও তাদের তেমন কোনও ধারণা নেই। তারা পাঠ্যবইয়ে বরকত, সালম, রফিক, শফিক, জব্বারের নাম মুখস্ত করেছে। তবে শহীদ মিনার কী, তারা চেনে না। এই দিনে প্রভাতফেরি, আলোচনা সভা কোনও কিছুই হয় না। তারা পাশের বিদ্যালয়ে গিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারিকরণ করে। কিন্তু সরকারিকরণের প্রায় ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও তবু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শতভাগ শহীদ মিনার তৈরির উদ্যোগ নেয়নি। যে কয়টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে, তাও স্লিপের টাকায় অথবা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে।

এ ছাড়া এলাকার মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোয় হাতেগোনা কয়েকটি শহীদ মিনার রয়েছে। জেলা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় জাতীয় দিবসগুলো ঘটা করে পালিত হলেও প্রত্যন্ত গ্রামের বিদ্যালয়ে তা পালিত হয় না।

সদর উপজেলার রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমেউল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘তাদের স্কুলে কোনও শহীদ মিনার নেই। শিক্ষার্থীরা পাশের হাইস্কুলে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেয়। আশা করি, চলতি বছরের জুন মাসের দিকে বাজেট পেলে শহীদ মিনার তৈরি করা হবে।’

সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি বছরে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য শহীদ মিনার তৈরির বাজেট পাস হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫০ ভাগ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোয় জাতীয় দিবস পালন করা হয়। তাই প্রতিটি বিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করা হবে।’