জনবল-সরঞ্জাম সংকটে ভুগছে নীলফামারীর ৮ ফায়ার স্টেশন

শিল্পকারখানা ও স্থাপনা বাড়লেও কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়েনি নীলফামারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের। জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম সংকটে ভুগছে জেলার আটটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন। এ অবস্থায় ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বিপাকে পড়েন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। আগুন নেভানো ও উদ্ধার অভিযানে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্র জানায়, আগের চেয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু সে অনুপাতে বাড়েনি জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম। কোনোমতে চলছে ফায়ার স্টেশনগুলোর কার্যক্রম।

জেলায় আটটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় একটি, ডোমার উপজেলায় একটি, ডিমলায় একটি, জলঢাকায় একটি, কিশোরগঞ্জে একটি, সৈয়দপুরে একটি, উত্তরা ইপিজেডে একটি ও চিলাহাটিতে একটি। সদর, সৈয়দপুর ও উত্তরা ইপিজেডের ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। বাকি স্টেশনগুলো ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্র জানায়, ‘এ’ শ্রেণির ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলোতে ৩৫ জন করে জনবল থাকে। এর মধ্যে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত সদর স্টেশনে ৩৯, সৈয়দপুরে ৩৯ ও উত্তরা ইপিজেডে ৩২ জন ফায়ারকর্মী রয়েছেন।

ডোমার উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন

‘বি’ শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে জনবল থাকার কথা ২৭ জন করে। ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত ফায়ার স্টেশনগুলোতে জনবল থাকার কথা ১৬ জন করে। কিন্তু ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত ডোমার স্টেশনে ২৪, চিলাহাটি স্টেশনে ২৪, ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত ডিমলা স্টেশনে ১০, কিশোরগঞ্জ স্টেশনে ১৪, জলঢাকা স্টেশনে ১৪ ও নীলফামারী উপ-সহকারী পরিচালকের কার্যালয়ে পাঁচ জন কর্মী রয়েছেন। 

এ ছাড়া জলঢাকা, সৈয়দপুর ও নীলফামারী সদর স্টেশনে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও বাকি পাঁচটিতে অ্যাম্বুলেন্স নেই। এ অবস্থায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ ফায়ারকর্মী ও ক্ষতিগ্রস্তদের হাসপাতালে নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার আট ফায়ার স্টেশনে বিভিন্ন পদে ২০১ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ১৭৮ জন। ‘এ’ শ্রেণির ফায়ার স্টেশনগুলোতে ২৭ জন থাকার কথা থাকলেও আছেন ২৪ জন। ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত স্টেশনে ১৬ জনের স্থলে আছেন ১০-১৪ জন।

খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর খড়িবাড়ী গ্রামের আব্দুল মোতালেব বলেন, ‘মার্চ মাসের শুরুতে আমার বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কিন্তু বাড়িতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে না পারায় তিনটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।’

ডিমলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের টিম লিডার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘উপজেলায় আগের চেয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে। তবে ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের কারিগরি এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়েনি। আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট আছে। আমাদের স্টেশনে গাড়ি নেই। জনবল যা আছে, তা পর্যাপ্ত নয়। বড় দুর্ঘটনায় হিমশিম খেতে হয়। অগ্নিনির্বাপণ কাজের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ডিমলা ফায়ার স্টেশনে পানিবাহী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স দরকার। দীর্ঘদিনেও এই সংকট দূর হয়নি।’

ডিমলা উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ-শ্রণিভুক্ত তিনটি স্টেশন বাদে বাকি পাঁচ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের বেহাল দশা। নেই জাম্বু কুশন, ড্রাইভিং অ্যাপারেটাস, এয়ার কম্প্রেসার মেশিন, পানিবাহী গাড়ি, পোর্টেবল পাম্প, বিদ্রিং অ্যাপারেটাস ও স্মোক ইজেক্টর। এজন্য বড় অগ্নিকাণ্ডে হিমশিম খেতে হয়। এ শ্রেণিভুক্ত স্টেশনগুলোতে যেসব যন্ত্রপাতি আছে, তা দিয়ে তিন-চার তলা বাড়ির আগুন নেভানো কঠিন।’

পৌর শহরের বড় ভবনগুলোতে আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলে জানালেন জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘যেসব যন্ত্রপাতি আছে, তা দিয়ে তিন-চার তলা বাড়ির আগুন নেভানো যায় না। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার সড়কগুলো প্রশস্ত না হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢোকানো যায় না। ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘১৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে সদর উপজেলা গঠিত। আমাদের একটি গাড়ি আছে। এটি পৌর এলাকায় চলাচলের উপযোগী। আমাদের যেসব স্টেশন ‘সি’ শ্রেণিভুক্ত সেগুলোকে ‘বি’ ও যেগুলো ‘বি’ শ্রেণিতে আছে সেগুলোকে ‘এ’ শ্রেণিতে আনা প্রয়োজন। তাহলে জনবল ও সরঞ্জাম বাড়বে।’