ভিজিডির কার্ড বিক্রির অভিযোগ

ইউপি সদস্য বললেন ‘আমি মেম্বার হলেও সব স্বামী দেখে’

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের রাখালপাড়ার অমল চন্দ্রের স্ত্রী অনিতা রানীকে (৪৭) ভিজিডির কার্ড বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক মহিলা ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্যের নাম দয়া রানী। তিনি খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য।

জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী ওই ইউপি সদস্যের আত্মীয় ও ভোটের সময়ের কর্মী। সেই সুবাদে একটি ভিজিডির কার্ড করে দেওয়ার আবদার করেন। এতে দয়া রানীর স্বামী অধীর কুমার পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। অনিতা নিজের লোক হিসেবে এক হাজার টাকা দেন এবং তার নামে কার্ডটিও হয়। কিন্তু ইউপি সদস্য কার্ড দিতে গড়িমসি করেন। কখনও বলেন, চেয়ারম্যানের কাছে আছে। আবার কখনও বলেন, উপজেলায় আটকে রেখেছে।

এদিকে, রবিবার (২ এপ্রিল) ভিজিডির চাল বিতরণ করা হয়েছে খবর পেয়ে ভুক্তভোগী ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে জানতে পারেন, তার নামের কার্ড দিয়ে চাল তোলা হয়েছে। এমতাবস্থায় ওই ইউপি সদস্যের কাছে গেলেও সাড়া দেননি। পর দিন (সোমবার) ইউপি সদস্য মোবাইলে কল করে বলেন, ‘তোমার কার্ড পাবে কিন্তু এবার চাল পাবে না’।

বুধবার (৪ এপ্রিল) বিকালে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন অনিতা রানী। তার দাবি, ‘এভাবে আরও অনেকের কার্ড করে দিতে গিয়ে টাকা নিয়েছেন দয়া রানী। আমি অতিরিক্ত টাকা দেইনি, তাই টাকা উশুল করতে আমার কার্ডের দুই মাসের ৬০ কেজি চাল অন্যের কাছে বিক্রি করেছেন।’

একই দাবি করেন বালাপাড়ার তানজিনা তিশাও। তার দাবি, ‘কার্ড পাইনি। মহিলা মেম্বার স্বামী-স্ত্রী মিলে কার্ড বাণিজ্য করেছেন। তাদের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

অভিযোগের বিষয়ে দয়া রানীর দাবি, ‘আমি কিছুই জানি না। টাকা নিয়ে থাকলে তা আমার স্বামী জানে। আমি মেম্বার হলেও সব কাজ করেন তিনি। তিনিই বলতে পারবেন কোথায় কী হয়েছে।’

তার স্বামী সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের যক্ষ্মা ও কুষ্ঠ রোগ বিষয়ক কর্মী অধীর কুমার দাবি করেন, ‘অনিতা রানী নামে কাউকে চিনি না। এ নামে কোনও কার্ড নেই। যার কথা বলছেন তিনি আসলে শান্তি রানী। এখানে টাকা নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তার চাল কে তুলেছে তাও বলতে পারবো না। কার্ড হয়ে থাকলে সে পাবে।’

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহজাদী বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগ পেলেই আমরা তদন্ত পূর্বক যথাযথ পদক্ষেপ নেবো।’

খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বাবু বলেন, ‘বেশ কয়েকজন আমার কাছে অভিযোগ করেছেন, তিনি টাকা নিয়ে কার্ড দিয়েছেন। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে যেই হোক তার বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান বলেন, ‘ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভিজিডির বিষয়ে টাকার বিনিময়ে কার্ড দিলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এতে সরকারের এবং উপজেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’