রাত হলেই শুরু হয় বন্য হাতির তাণ্ডব

কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে রাত হলেই ভারতীয় বন্য হাতি ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে। গত শনি ও রবিবার রাতে ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বন্য হাতি বাংলাদেশে ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 

এ অবস্থায় ঢাকঢোল বাজিয়ে, আগুন জ্বালিয়ে ও পটকা ফুটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। তবে এসব উদ্যোগ তেমন ফলপ্রসূ না হওয়ায় আবারও তাণ্ডবের আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, দুই রাতে হাতির তাণ্ডবে সীমান্ত এলাকায় অন্তত ৫ হেক্টর বোরো ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। হাতির প্রবেশ ঠেকানো না গেলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালে সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে নেমে আসে একাধিক বন্য হাতি। রৌমারী সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১০৭১-এর কাছে আলগারচর এলাকা দিয়ে এসব হাতি লোকালয়ে ঢুকে। রাতভর এসব হাতি উপজেলার আলগারচর, খেওয়ারচর, বকবান্ধা, ঝাউবাড়ী, পাটাধোয়াপাড়া, কলাবাড়ী, বারবান্ধা, চুলিয়ারচর, বড়াইবাড়ী ও পূর্ব দুবলাবাড়ীর ১০ গ্রামের ফসলি জমিতে তাণ্ডব চালায়। এ সময় বোরো ধানের চারা খেয়ে ফেলার পাশাপাশি তছনছ করে ফেলে। দিনের আলো ফোটার আগেই রবিবার ভোরে হাতিগুলো ভারতে চলে যায়। পরে রবিবার রাতে আবারও বাংলাদেশে ঢুকে ফসলি জমিতে তাণ্ডব চালায়।

তবে হাতির দল চলে গেলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকদের। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছর সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় বন্য হাতি কয়েকবার করে বাংলাদেশে ঢুকে ফসলসহ ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি করে। যাতে ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নেওয়ার  দাবি জানান সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন।

ঝাউবাড়ী গ্রামের গোলাম হোসেন জানান, তার ২০ শতক জমির বোরো ধান খেয়ে ফেলাসহ নষ্ট করেছে হাতি। এ ছাড়া সোহান আলী, কলাবাড়ী গ্রামের মোবারক হোসেন, আব্দুল কাদের, বারবান্ধা গ্রামের রঞ্জু মিয়া এবং চুলিয়ারচর গ্রামের নজরুল ইসলামসহ অর্ধশতাধিক কৃষকের বোরো ফসল খেয়ে ও নষ্ট করেছে এসব হাতি।

উপজেলার পাটাধোয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল হাই জানান, ভারত থেকে আসা হাতির দলটি তার সেচ মেশিনের পাইপ ভেঙে ফেলেছে।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, ‘ভারতীয় বন্য হাতি বাংলাদেশে ঢুকে কৃষকের জমির ধান খেয়ে ফেলছে। পায়ে পিষ্ট করে নষ্ট করেছে ফসল। এতে এখানকার কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্চে। বোরো মৌসুমের শেষ দিকে এভাবে হাতি প্রবেশ করতে থাকলে সীমান্তবর্তী এলাকার কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।’

রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘দুই রাতে ভারতীয় বন্য হাতির আক্রমণে সীমান্ত এলাকার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রতি বছর এ মৌসুমে বন্য হাতি এভাবে ক্ষতি করে আসছে।’

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘হাতির তাণ্ডবে রৌমারী সদর ইউনিয়নের ফুলবাড়ী ব্লকে শূন্য দশমিক ৮৫ হেক্টর, চুলিয়ারচর ব্লকে ২ দশমিক ২৫ হেক্টর এবং যাদুরচর ইউনিয়নের পাহাড়তলী ব্লকে ২ হেক্টরসহ ৫ দশমিক ১ হেক্টর জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম সারোয়ার রাব্বীকে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।