চামড়া নিয়ে বিপদে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

নীলফামারীতে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। পশু জবাইয়ের পর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। চামড়া যেন গলার কাঁটা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মৌসুমি ও পাইকাররা।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বিকালে জেলা শহরের বড় বাজার ট্রাফিক মোড়, চৌরঙ্গীর মোড়, আনন্দবাবুর পুল ও উকিলের মোড় ঘুরে চামড়া নিয়ে কোরবানি দাতা ও ব্যবসায়ীদের হতাশার চিত্র দেখা যায়।

শহরের বাড়াইপাড়া মহল্লার মৌসুমি ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে গ্রাম ঘুরে এক পিস ৪৫০-৫০০ টাকা দরে ৩০টি গরুর চামড়া কিনে বিকালে বাজারে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চামড়া কিনে পথে বসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘১৫ হাজার টাকার চামড়া কিনে এখন বাজারে পাইকাররা দাম করছে অর্ধেকের একটু বেশি। চামড়ার একমাত্র উপকরম লবণ। সেটি দোকান থেকে চড়া দামে (২২ টাকা কেজি) কিনতে হচ্ছে।’

সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া গ্রামের অপর মৌসুমি ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, ‘গ্রাম ঘুরে ৫০ পিস ছাগলের চামড়া দেড় হাজার কিনে এখন বাজারে নেওয়ার পর পাইকাররা ৪০০-৫০০ টাকা দাম বলছেন। এখন কী হবে জানি না। প্রতিটি চামড়া ২০ থেকে ৩০ টাকায় কিনে এখন পাইকারের কাছে পানির দামে দিতে হচ্ছে।’

জেলা শহরের ট্রাফিক মোড় বড় বাজারে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর চামড়া। আর ছাগলের চামড়া প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এতে বেশি মূল্যে চামড়া কিনে হাজার হাজার টাকা লোকসানে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (৩০ জুন) সকালে ওই মোড়ে ছাগলের চামড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মতিলাল দাস বলেন, ‘গত বছর ১০০ পিস ছাগলের চামড়া কিনে পানির দামে বিক্রি করেছি। এবার সরকারি রেট ধরে চামড়া কিনে কী যে হবে তা বলা মুশকিল। আড়তদাররা একচেটিয়া ব্যবসা করে। ফলে ফড়িয়া ও ছোট ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়। তারা যা বলে তাই আমাদের শুনতে হয়।’

জেলা শহরের জোড়দড়গা মাদ্রাসার শিক্ষক আহমেদ হুসেন জানান, এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য গরু, ছাগল মিলে ১৮০ পিস চামড়া কালেকশন করা হয়। বর্তমানে ওই চামড়া বিক্রি করে পরিবহন খরচই উঠবে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন বাজারে চামড়ার ব্যাগ, সেন্ডেল, পার্স ও মানি ব্যাগ (চামড়া জাতীয় পণ্য) কিনতে গেলে বেশি দামে কিনতে হয়। এর কারণ কী? অথচ বছরের একবার কোরবানির পশু জবাই হয়, তাও আবার সেই চামড়া পানির দামে বিক্রি করতে হয়। এসব দেখার কেউ নেই।’

জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১৫-২০ জন চামড়া (আড়তদার) ব্যবসায়ী তাদের পাওনা টাকা আদায় করতে না পারায় বর্তমানে অর্থাভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। শহরের বাড়াইপাড়ার পাইকার ব্যবসায়ী তসলিম উদ্দিন জানান, গত বছরের সাত লাখ টাকা মহাজনের ঘরে পড়ে আছে, পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় লাভের আশায় ফের ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছোট ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া দালালদের কাছ থেকে চামড়া কিনে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারিতে সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু এবার আর্থিক সংকটের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ী, মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

নীলফামারী শিল্প ও বণিক (চেম্বার অব কমার্স) সমিতির সভাপতি প্রকৌশল এস এম সফিকুল আলম ডাবলু বলেন, ‘এই চামড়া ছোট ব্যবসায়ীসহ চারবার হাতবদল হয়। প্রথমে মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রাম ঘুরে কোরবানি দাতার কাছ থেকে চামড়া কেনেন। দ্বিতীয় ধাপে পাইকাররা নগদ টাকা দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিকট কেনেন। তৃতীয় ধাপে আড়তদাররা লবণ দিয়ে লাভের আশায় ঘরে কিছু দিন রাখেন। চতুর্থ ধাপে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর চামড়াগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন।’

তিনি বলেন, ‘ফলে ট্যানারি মালিকদের লোকসান গুনতে হয় না। তবে শহর কিংবা গ্রামের পাড়া মহল্লা ঘুরে চামড়া কিনে লোকসান গুনতে হয় মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীদের। এ কারণে ট্যানারির মালিকদের কাছে জিম্মি থাকেন মৌসুমি ও পাইকাররা।’