গরুর দাম ৬৭ হাজার, চামড়া বিক্রি হলো ১০০ টাকায়

‘হামরা শুনছি বাহে এবার ঈদে কোরবানির গরু ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। হামার চামড়ায় নেয় না বাহে। এখন সেই দামতো দূরের কথা পাইকারই চোখে পড়ে না।’ কোরবানির গরুর চামড়ার দাম না পেয়ে হতাশ হয়ে কথাগুলো বলেন নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালীপাড়া গ্রামের কোরবানিদাতা আইয়ুব আলী (৬০)।

তিনি বলেন, ‘৬২ হাজার ৫০০ টাকায় গরু (প্রায় ৩০ ফিট) কোরবানি করে চামড়া বিক্রি করলাম মাত্র ১৫০ টাকায়। এবার গ্রামে পাইকার চামড়া কিনতে আসেনি। চামড়ার বাজার নেই বলে অনেকেই এতিমখানা, মাদ্রাসা ও মসজিদে দান করে দিয়েছে।’

ওই গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (২৭) বলেন, ‘সরকার যে রেট দিয়েছে সেটি পেলেও একটি গরুর চামড়া বিক্রি হতো এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। সেটা দিয়ে অন্তত চারটি গরিব পরিবারের একদিনের খাবার হতো। গত দুই বছর ধরে কোরবানিদাতার গলার কাঁটা এই চামড়া।’

এদিকে, জেলা শহরের পাইকার ব্যবসায়ী রবিউল হোসেন (৩৭) বলেন, ‘গত দুই তিন বছর ধরে এতিম অসহায় গরিব মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে কোরবানির চামড়া বিক্রির টাকা থেকে। আবার কিছু কিছু হাফেজ ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওই টাকা দিয়ে সারা বছরের খাবার চলে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীরা।’

জেলা শহরের নিউবাবুপাড়ার বাপ্পি মিয়া বলেন, ‘১৫ হাজার টাকার ছাগল কোরবানি করে শুক্রবার সকালে বাজারে চামড়াটি বিক্রি হলো ২৫ টাকা। শুনেছি, সরকার খাসি ছাগলের চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা। সেই অনুপাতে আমার চামড়া দাম হয় ৩৫০ টাকা। কে দিবে এই টাকা? দেশের চামড়া শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের কাছে দাবি করেন।’

ওই মহল্লার বাসিন্দা ও কোরবানিদাতা খতিবর রহমান খোকন বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিবর্গ ফুটে ৩-৪ টাকা বেশি হলেও গ্রাম পর্যায়ে কোরবানিদাতারা সেই দাম পায়নি। ৬৭ হাজার টাকায় গরু কিনে চামড়া বিক্রি করেছি ১০০ টাকায়। তার মানে হলো কাজির গরু হিসাবে আছে কিতাবে (গোয়ালে) নাই। তাই চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে হলে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’

জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির (চেম্বার অব কমার্স) সভাপতি প্রকৌশলী এস এম সফিকুল ইসলাম জানান, চামড়া জাতীয় পণ্য কাঁচামাল। তাই তিন-চারবার হাতবদল হয়। প্রথম ধাপে ফড়িয়ারা ও মৌসুমি, দ্বিতীয় ধাপে পাইকারি ব্যবসায়ীরা ও তৃতীয় ধাপে মাঝারি আড়তদাররা জড়িত থাকে।

তিনি বলেন, চতুর্থ ধাপে ট্যানারির মালিকরা এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফড়িয়া ও মৌসুমি ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে রাখে। ফলে লোকসানে পড়ে মৌসুমি, পাইকার ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। সরকার নির্ধারিত বর্গফুট অনুযায়ী চামড়ার মূল্য পরিশোধ করার জন্য ট্যানারি মালিকদের অনুরোধ জানান তিনি।