রংপুরে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক আহত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে রংপুরের মিঠাপুকুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পুলিশ সদস্য ও এক সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হন। এদের মধ্যে ২০ জনকে মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত চলা এই সংঘর্ষে দুই পক্ষ রামদা-ছোরাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সময় রংপুর-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং উপজেলা সদরের সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের নেতৃত্বে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ওভারপাসের নিচে সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। অপরদিকে রংপুর-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আশিকুর রহমানের সমর্থকরা মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আট থেকে ১০ হাজার নেতাকর্মীর বিশাল বহর উপজেলা সদরের ঈদগাহ চত্বরে জড়ো হয়। অপরদিকে আশিকুর রহমান এমপির সমর্থকরা সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমবেত হয়।

নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

বিকাল ৪টার দিকে জাকির হোসেনের নেতৃত্বে বিশাল মিছিল ঈদগাহ মাঠ থেকে বের হয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরের কাছে আসলে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় হেলমেট পরে রামদা-ছোরা, লাঠিসোঁটা ও ইট-পাটকেল নিয়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। পুরো উপজেলা সদর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে দুই পুলিশ সদস্য ও এক সাংবাদিকসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ প্রথমে দুই পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেন। পরে শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ঘটনার ব্যাপারে জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে অনেক আগেই উপজেলা সদরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে আশিকুর রহমান ও তার ছেলে রাশেক রহমানের সমর্থকরা পেছন থেকে হামলা চালিয়ে শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। পুলিশ এমপির লোকজনকে না থামিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুরভাবে লাঠিচার্জ করেছে।’ অবিলম্বে তিনি দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

দুই পক্ষের সংঘর্ষ

আশিকুর রহমান এমপির সমর্থক ইউপি চেয়ারম্যান টুটুল বলেন, ‘জাকির হোসেনের নেতৃত্বে আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদের আহত করা হয়েছে।’

সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ২০ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১০ জনের নাম জানা গেছে। এরা হলেন- মোতালেব, আক্কাছ , মমিন, মেরাজুল, সৌমিক , শাহানাজ বেগম, নাজিলা বেগম , মমিনুল এবং সাংবাদিক রবি খন্দকার।

এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।’