দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন, সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত, নির্বাচনি প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য রংপুর জেলা, মহানগর ও তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাদের ঢাকায় ডেকেছে কেন্দ্র। বুধবার (১১ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাদের এই বৈঠকে ডাকা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাদায়েত হোসেন বকুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলসহ একাধিক নেতা।
জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বুধবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক, সাবেক কমিটির সভাপতি, সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ, মিঠাপুকুর, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ দলের শীর্ষ নেতারা থাকবেন।
যে কারণে বৈঠক
দলের একাধিক নেতা এবং দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের ঘনিয়ে আসছে। রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ায় দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হওয়ায় রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর রংপুর মহানগর ও জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে দলের অবস্থান কতটুকু হয়েছে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
অন্যদিকে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মধ্যে অন্তঃকোন্দলসহ নানান বিষয় গণমাধ্যমে আসায় সেগুলো আলোচনায় আসতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের চার আসন- যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসছে সেগুলোর বর্তমান অবস্থা দলীয় কোন্দল, এমপিদের জনপ্রিয়তাসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় হবে।
তিন উপজেলার নেতাদের তলবের কারণ
রংপুর-৪ আসন পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনের কয়েকবার ধরে নির্বাচিত এমপি হচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তার বিকল্প এখনও কেউ নেই। তবে পীরগাছা উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে একটিতে জামায়াত আর তিনটিতে বিএনপি প্রার্থীরা জয়ী হয়। অন্যদিকে কাউনিয়া উপজেলায় ছয় ইউনিয়নের মধ্যে চারটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী, দুটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হয়।
এ ছাড়াও হারাগাছে মন্ত্রীকে স্বাগত জানানো নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র শতাধিক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। অনেকেই কারাগারে ছিলেন। সার্বিক বিষয়ে দলের অবস্থান মজবুত করতে দলীয় কোন্দল দূর করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
অন্যদিকে, মিঠাপুকুর উপজেলা হচ্ছে রংপুর-৫ আসন। এ আসনে পর পর তিনবারের এমপি হচ্ছেন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। এখানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঙ্গে এমপির দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। দীর্ঘ [আঁচ বছর ধরে কমিটিবিহীন ছিল মিঠাপুকুর।
সেখানে কয়েকদিন আগে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হলেও এখনও দ্বন্দ্বের নিরসন হয়নি। এসব বিষয় সমাধান করা জরুরি বলেও মনে করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
সার্বিক বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাদায়েত হোসেন বকুল বলেন, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে এখন আগের থেকে অনেক শক্তিশালী। মিঠাপুকুর ও কাউনিয়ার সমস্যা মিটে যাবে।
অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শাফিয়ার রহমান তাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে বলে স্বীকার করে জানান, নানান বিষয়ে আলোচনা হবে।