সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে কৃষিজমি দখলের অভিযোগ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সান পাওয়ার লিমিটেড ও এম এ গ্রীন নামে দুটি সোলার বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির বিরুদ্ধে স্থানীয়দের কৃষিজমি দখল ও জালিয়াতির মাধ্যমে জমি কেনার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদে দুই শতাধিক এলাকাবাসী কুড়িগ্রাম শহরে মানববন্ধন করেছে। সোমবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করা হয়।

এর আগে ফুলবাড়ী উপজেলা থেকে দুই শতাধিক ব্যক্তি ধরলা নদী পার হয়ে শহরে আসেন। তারা উপজেলার শিমুলবাড়ী ও বড়ভিটা ইউনিয়নের চর সোনাইকাজী, চর যতীন্দ্রনারায়ন, তালুক-মেকলী ও পশ্চিম ধনীরাম এলাকার বাসিন্দা।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কৃষকরা দাবি করেন, সান পাওয়ার লিমিটেড ও এম এ গ্রীন নামে দুটি কোম্পানি উপজেলার শিমুলবাড়ী ও বড়ভিটা ইউনিয়নে সোলার গ্রিড স্থাপনের কাজ করছে। তারা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের নামে তিন ফসলি জমি দখল করছে। নামে-বেনামে ভুয়া দলিল তৈরি করে কৃষকদের জমি দখল করছে। যারা জমি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না, সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করে তাদের জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। ভুক্তভোগী কৃষক ও এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী হাবিবুর রহমান হাবিব, কৃষক হামিদ নুর ইসলাম, ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন ও ইউপি সদস্য তোজাম্মেল হক বলেন, সান পাওয়ার লিমিটেড এবং এম এ গ্রীন সোলার কোম্পানি দুটি এলাকায় এসে কিছু দালালকে লোভ দেখিয়ে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা বলে ভুয়া মালিক সাজিয়ে স্থানীয়দের জমি কিনছে। সামান্য কিছু জমি লিজ নিলেও তারা প্রায় ৭৪০ একর তিন ফসলি জমি সীমানাপ্রাচীর দিয়ে ঘিরে রেখেছে। প্রতিবাদ করায় অনেকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

আরও আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী তিন ফসলি জমিতে কোনও প্রকল্প নেওয়া যাবে না।  কিন্তু কোম্পানি দুটি স্থানীয় কিছু দালালকে নিয়ে তিন ফসলি জমিতে জোর করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। তাদের নির্ধারিত প্রকল্প এলাকায় বসতি থাকলেও সেটার পরোয়া করছে না। গ্রামের দরিদ্র মানুষজন প্রশাসনকে অবহিত করেও কোনও সমাধান পাচ্ছেন না। তাই আমরা বাধ্য হয়ে মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ফসলি জমিতে সোলার প্রকল্প বাতিল করা আহ্বান জানান জমির মালিকরা। পরে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমএ গ্রীন কোম্পা‌নির তত্ত্বাবধানের দা‌য়ি‌ত্বে থাকা মেরাজ হো‌সেন ব‌লেন, ‘আমরা ২৫ বছ‌রের জন্য ১২০ একর জ‌মি লিজ নি‌য়ে‌ছি। কোনও জ‌মি কি‌নি নাই। ফ‌লে আমা‌দের বিরু‌দ্ধে কেউ দখল বা অ‌বৈধভাবে কেনার অ‌ভি‌যোগ দি‌লে, তা স‌ঠিক নয়।’ 

ত‌বে সান পাওয়ার কোম্পা‌নির বিরু‌দ্ধে ওঠা অ‌ভি‌যো‌গের কিছুটা সত্যতা র‌য়ে‌ছে। তারা এখনও সরকা‌রের অনুম‌তি পায়‌নি। এ ব্যাপারে সান পাওয়ার সোলার লি‌মি‌টে‌ডের সি‌নিয়র ম্যানেজার ও‌হিদুল ইসলাম ব‌লেন, ‘অ‌ভি‌যোগগু‌লো স‌ত্য নয়। আমরা যাচাই-বাছাই করে জ‌মি কিনছি। এখনও আমা‌দের কা‌ছে কোনও ভুল ধরা প‌ড়ে‌নি। এরপরও কেউ ভুল ধ‌রি‌য়ে দি‌লে আমরা সেটা সং‌শোধন কর‌বো। আর এখনও সীমানাপ্রাচীর দিই‌নি। ফ‌লে কারও জ‌মি আমাদের ভেত‌রে নেওয়ার সু‌যোগ নেই।’

সরকা‌রি অনু‌মোদনের বিষয়ে জানতে চাইলে ও‌হিদুল ব‌লেন, ‘আমরা আ‌বেদন ক‌রে‌ছি। আমা‌দের প্রকল্প‌টি প্রস্তা‌বিত। অনু‌মোদন পে‌লে প্রক‌ল্পের কাজ শুরু হ‌বে।’