কুড়িগ্রামের একমাত্র নারী প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রামের চারটি সংসদীয় আসনে সর্বমোট ৩৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে একমাত্র নারী মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ মোট ১৪ জনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

রবিবার (৩ ডিসেম্বর) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ এ ঘোষণা দেন।

মনোনয়ন বাতিল হওয়া একমাত্র নারী মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থী মোছা. শেফালী আক্তার। তিনি কুড়িগ্রাম-২ আসন (কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট) থেকে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। 

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, শেফালী আক্তার জেলার রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের চর কাজাইকাটা গ্রামের বাসিন্দা। তবে তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি বর্তমানে কুড়িগ্রাম সদরের পাঠানপাড়ায় বাস করছেন। তার স্বামী একজন স্কুলশিক্ষক।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, শেফালী আক্তারের দাখিলকৃত মনোনয়নপত্রে তিনটি অসংগতি পাওয়া গেছে। এগুলো হলো, তার প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর তথ্য সঠিক নেই। তিনি নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎসের বিবরণী পূরণ ও স্বাক্ষর করেননি। এ ছাড়াও সম্পদ ও দায় এবং বাৎসরিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণী ফরম পূরণ ও স্বাক্ষর করেননি।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে, শেফালী আক্তারের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসএস (সম্মান)। তিনি পেশায় একজন গৃহিণী। তার আয়ের উৎস কৃষি খাত। এই খাত থেকে তার বাৎসরিক আয় ৫০ হাজার টাকা। মনোনয়নপত্র দাখিলকালীন সময় তার নগদ ৬ লাখ টাকা স্থিতি রয়েছে। এ ছাড়াও অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ৫০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী এবং ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে।

মনোনয়নপত্র বাতিল ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে শেফালী আক্তার বলেন, ‘মনোনয়নপত্রের প্রয়োজনীয় তথ্য সন্নিবেশ করে আমি আপিল করেছি। আশা করছি আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পাবো।’

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের (রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর) বাসিন্দা হয়েও কুড়িগ্রাম-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে শেফালী বলেন, ‘আমি এখন জেলা সদরে থাকি। এজন্য দল আমাকে এই আসন থেকে মনোনয়ন দিয়েছে।’

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে তারা আপিল করতে পারবেন। আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পেলে তারাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।’

প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রামের চারটি সংসদীয় আসনে মোট ১৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বাতিলদের মধ্যে ৫ জন দলীয় এবং ৯ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এক শতাংশ ভোটার সমর্থনসূচক তালিকায় ত্রুটি থাকায় ৯ স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়। আর নির্বাচনি ব্যয় নির্বাহের অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস, বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের বিবরণী ও আয়কর বিবরণীসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ত্রুটিজনিত কারণে ৫ দলীয় প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ২৫ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল

কুড়িগ্রাম-১ (ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী) আসনের মো. আতিকুর রহমান (স্বতন্ত্র), কুড়িগ্রাম-২ (কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী ও রাজারহাট) আসনের মোছা. শেফালী বেগম (বিএসপি), মো. আবু সুফিয়ান (স্বতন্ত্র), মো. নাজমুল হুদা (স্বতন্ত্র), মো. মশিউর রহমান (জাকের পার্টি), মো. শফিউজ্জামান (স্বতন্ত্র) এবং মো. হামিদুল হক খন্দকার (স্বতন্ত্র)।

কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর) আসনের শাহ মো. নুর-ই শাহী (স্বতন্ত্র), মোহাম্মদ আবু শামিম হাবীব (কৃষক শ্রমিক জনতালীগ), আতিকুর রহমান খান (তৃণমূল বিএনপি), আব্দুল হামিদ (বাংলাদেশ কংগ্রেস), জোবাইদুল ইসলাম বাদল (স্বতন্ত্র), ফারুকুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) এবং মো. মাছুম ইকবাল (স্বতন্ত্র)।