বিরাট রাজার ঢিবি খননে প্রাচীন ও মধ্যযুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ঐতিহাসিক বিরাট রাজার এলাকায় ঢিবি খনন করে প্রাচীন ও মধ্যযুগের অবকাঠামোর কিছু নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইটের তৈরি প্রাচীন অবকাঠামোসহ নানা ধরনের প্রত্নতত্ত্ব। বিরাট রাজার ঢিবিতে প্রথমবারের মতো খননকাজ পরিচালনা করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আট সদস্যের একটি দল। প্রথমবার খননের মাঝামাঝি সময়ে বেরিয়ে আসে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। যেগুলো প্রাচীন ও মধ্যযুগের বলে ধারণা করছেন খননকাজে নিয়োজিতরা।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এবং খনন পরিচালনা দলের প্রধান ড. নাহিদ সুলতানা এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘গত ১৭ ডিসেম্বর এখানে খননকাজ শুরু হয়েছিল। দেড় মাস খননকাজ শেষে বেশ কিছু প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে। এখনও খননকাজ অব্যাহত আছে। আমাদের ধারণার চেয়ে অধিক বড় আকারের অবকাঠামো পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত এখানে পোড়ামাটির ভগ্নাংশ, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট (সাধারণত ধর্মীয় উপাসনালয়ের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়), ভিত্তিপ্রস্তর, ও পিলার পাওয়া গেছে। যা প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য বহন করে। বর্তমানে ঢিবিটির আকার ৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৩৫ মিটার এবং উচ্চতা চার মিটার। এছাড়া এর আশপাশে আরও চারটি ঢিবি রয়েছে। তবে নিদর্শনগুলো ঠিক কোন আমলের এবং কারা এখানে বাস করতেন বা কাদের রাজ্য ছিল, বড় আকারে খননকাজ সম্পূর্ণ না হলে তা সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। আমরা পুরো খননকাজ শেষে এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবো।’

খননকাজ পরিচালনা করছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের আট সদস্যের একটি দল

জনশ্রুতি আছে, এখানে প্রাচীন দুর্গ নগরী ছিল। যার নিরাপত্তার জন্য ছিল সুউচ্চ প্রাচীর এবং প্রাচীরের বাইরে প্রশস্ত ও সুগভীর পরিখা। তবে খননকারী দল এখন পর্যন্ত প্রাচীন দুর্গ নগরীর কোনও চিহ্ন খুঁজে পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, মূল অবকাঠামোর সঙ্গে আরও দুই-তিনটি মন্দিরের সংযোগ সড়ক ছিল, যা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এদিকে, খাঁজা এম এ কাইয়ুম নামের স্থানীয় গবেষক দীর্ঘ ৪০ বছর বিরাট রাজার ঢিবি নিয়ে গবেষণা করেছেন। তার নোটবুকের তথ্য অনুসারে, বিরাট রাজা পুরো ভারতবর্ষে ‘মৎস্যরাজ’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এই অঞ্চলে মাছ চাষের জন্য তিনি ৯৯৯টি পুকুর খনন করেন। রাখাল রাজ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২৫-২৬ সালে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ১৯০৫ সালের দিকেও এই স্থানটি জঙ্গলে ঘেরা ছিল। কয়েক বছর আগে সাঁওতালরা জায়গাটি পরিষ্কার করে ঘরবাড়ি তৈরি করেন। 

এ ব্যাপারে নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘খননকাজ শেষে এসব বিষয় পরিষ্কার হবে। প্রত্নতত্ত্বস্থলটি ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। তবে বড় পরিসরে খননকাজ করে জায়গাটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।’

গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে এখানে খননকাজ শুরু হয়েছিল

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর বিরাট রাজার ঢিবির খননকাজ শুরু করে গত ১৭ ডিসেম্বর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল খননকাজটি করছে। দলের আট সদস্য হলেন ড. নাহিদ সুলতানা, ড. আহমেদ আবদুল্লাহ, রাজিয়া সুলতানা, হাবিবুর রহমান, এস.এম হাসানাত বিন ইসলাম, মো. আবুল কালাম আজাদ, তারিকুল ইসলাম ও উম্মে সালমা ইসা। এছাড়া ২০ জন শ্রমিক খননকাজে নিয়োজিত আছেন।

উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিক খননকাজের আগে এখানে ১৯৭৮ সালে পাওয়া যায় সংস্কৃত অক্ষরে খোদাই করে ‘নম: নম: বিরাট’ লেখা ৯ ইঞ্চি দীর্ঘ মহামূল্যবান একটি শিলালিপি। যা মহাস্থানগড় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এছাড়া কৃষ্ণ রঙের শিলা পাথর দিয়ে তৈরি হস্তি মস্তক রাজশাহী জাদুঘরে ও সিংহদ্বারের একটি পাথরের খাম্বা মহাস্থানগড় জাদুঘরে রয়েছে। প্রায় ৫ টন ওজনের একজোড়া পাথরের কপাট যুগ যুগ ধরে পতিত অবস্থায় ছিল। যা পরবর্তীতে খণ্ড খণ্ড করে নিয়ে গেছে গ্রামবাসী।