অতিদরিদ্রের কর্মসংস্থান কর্মসূচি

কবরস্থানের মাটি ভরাটের কাজে শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ!

লালমনিরহাটে অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) কাজে শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেইসঙ্গে কর্মসূচির কাজে শ্রমিক হিসেবে প্রভাবশালীদের নাম দেওয়া হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় আদিতমারী উপজেলার কেন্দ্রীয় কবরস্থানে ৩০ হাজার ৩০ ঘনফুট মাটি ভরাটের কাজ গত ১৫ এপ্রিল শুরু হয়। ৩৩ দিনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। শ্রমিক নিয়োগের কথা ২৬ জন। শ্রমিকের মজুরি বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৮৫০ টাকা। উপজেলার ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের ১, ২ ও ৩ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী সদস্য (মেম্বার) মমেনা বেগমকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজের দেখাশোনা ও শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) হায়দার আলী আখন্দ। প্রত্যেক শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ধরা হয়েছে ৪০০ টাকা। হিসাবে একজন শ্রমিক ৩৩ দিন কাজ করলে মজুরি পাবেন ১৩ হাজার ২০০ টাকা। অথচ শ্রমিক নিয়োগের সময় একেক জনের কাছ থেকে তিন-চার হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন মেম্বার হায়দার আলী আখন্দ। সেইসঙ্গে স্বাবলম্বী অনেককে প্রকল্পের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। 

শ্রমিকদের তালিকায় দেখা গেছে, ওই ইউনিয়নের আদিতমারী গ্রামের বাসিন্দা আবু সাঈদ, কামিনী বেগম, আমিনা বেগম ও বর্ণা বেগমের নাম রয়েছে। এর মধ্যে বর্ণা জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক মালিকুল ইসলামের মেয়ে। তার মজুরি ধরা হয়েছে ৮০০ টাকা। বাকিরা স্বাবলম্বী এবং কৃষিকাজ করেন। তারা কেউ কাজে আসেন না। তবে ঠিকই মজুরি নিচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সমবায় অফিসার মো. ফজলে এলাহীকে প্রকল্পের কাজ দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে একাধিক দিন ঘটনাস্থলে গিয়েও এই কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি।

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, কাজের ২০-২১ দিন পার হলেও একদিনও প্রকল্পের কাজ দেখতে আসেননি উপজেলা সমবায় অফিসার। এমনকি প্রশাসনের কোনও কর্মকর্তা আসেননি।

কর্মসূচির কাজে শ্রমিক হিসেবে প্রভাবশালীদের নাম দেওয়া হয়েছে

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সমবায় অফিসার মো. ফজলে এলাহী বলেন, ‘আমি নিয়মিত প্রকল্পের কাজ দেখতে যাই। তবে শ্রমিক নিয়োগে টাকা লেনদেনের বিষয়টি দেখা আমার কাজ নয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক জানিয়েছেন, শ্রমিক নিয়োগে ঘুষ, স্বাবলম্বী ও প্রভাবশালীদের নাম তালিকায় দিয়ে টাকা নয়ছয়ের বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলামও জানেন। 

তবে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি জানেন না দাবি করে মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘যদি টাকা লেনদেনের প্রমাণ কিংবা অভিযোগ কেউ দিতে পারে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো।’

প্রকল্পের তিন নারী শ্রমিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, আমরা ঠিকমতো সংসার চালাতে পারি না। গরিব মানুষ তাই এই কাজ করে খাই। মেম্বার হায়দার আলী বলেছেন, ঘুষ না দিলে কাজে নেবেন না। আমরা বাধ্য হয়ে কেউ ছাগল বিক্রি করে, কেউ সুদের ওপর টাকা নিয়ে মেম্বারকে দিয়েছি। এখন যে এসব কথা বলেছি, মেম্বার জানলে তালিকা থেকে আমাদের নাম কেটে দেবে। তখন না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের।

শ্রমিকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পাওয়া মেম্বার মমেনা বেগম বলেন, ‘টাকা লেনদেনের বিষয়টি শুনেছি। তবে আমি কোনও শ্রমিকের কাছ থেকে টাকা নিইনি।’

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মেম্বার হায়দার আলী আখন্দ বলেন, ‘এখন প্রকল্পের কাজে ব্যস্ত আছি। ব্যস্ততা শেষ হলে একদিন বসে কথা বলবো।’