X
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫
১৬ আষাঢ় ১৪৩২

টাঙ্গুয়ার হাওরে সুদিন ফেরাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
৩০ জুন ২০২৫, ১৮:৪৬আপডেট : ৩০ জুন ২০২৫, ১৮:৪৬

টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা ও হাওরপারের মানুষের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। হাওরের সংকট চিহ্নিত করে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। হাওরে সুদিন ফেরাতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে।

সোমবার (৩০ জুন) সকালে পরিবেশগতভাবে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে শুরু হওয়া নতুন প্রকল্পের সূচনা উপলক্ষে আয়োজিত কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ কর্মশালা হয়।

‘টাঙ্গুয়ার হাওর: জলাভূমি বাস্তুতন্ত্রের সম্প্রদায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি পরিচালিত হবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) যৌথ ব্যবস্থাপনায়। এতে ব্যয় হবে ৪৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের লক্ষ্য হলো টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমির সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা, যার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে যৌথ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করা, সংকটাপন্ন জলাবন ও জলজ আবাসস্থল পুনরুদ্ধার করা এবং বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পালের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অঞ্জন কুমার দেব রায়। এতে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন প্রকল্পের পরিচালক শাহেদা বেগম। কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, হাওরপারের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন অংশ নেন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার।

মূল বক্তব্যে শাহেদা বেগম জানান, এ প্রকল্পে হাওরের জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান নির্ধারণ, মানচিত্র প্রস্তুত করে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। হাওরের ইকোসিস্টেমের মূল্য নির্ধারণ ও জীববৈচিত্র্যের রেজিস্টার তৈরি করা হবে। হাওর ব্যবস্থাপনায় সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে টেকসই অর্থায়নকৌশল প্রণয়ন, অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পে স্থানীয় মানুষদের সম্পৃক্ত করতে প্রশিক্ষণ, কর্মশালা হবে। ৩৮০টি পরিবারকে বিকল্প আয় বৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হবে। স্থানীয় মানুষজনকে নিয়ে কান্দায় জলাভূমি বাগান, বিলের আবাসস্থল উদ্ধার, মাছ ও অন্যান্য জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য ১০টি অভয়াশ্রম তৈরি করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে।

মুক্ত আলোচনায় হাওরপারের লোকজন বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২২ বছরেও কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। এই সময়ে নানা প্রকল্প হয়েছে। এতে মানুষের মনে একটা অবিশ্বাস ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংকটে আছে। গাছ, মাছ, পাখি কমে গেছে।

কর্মশালায় সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার, শিক্ষক মোদাচ্ছের আলম, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা, সাধারণ সম্পাদক পিযুষ পুরকায়স্থ, সমবায় কর্মকর্তা মো. মাসুদ আহমদ, সাংবাদিক দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, হাওরপারের বাসিন্দা গোলাম নূর, নূর আলম, অজিত হাজং ও আইরিন বেগম বক্তব্য দেন।

সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার বলেন, ‘এই হাওর নিয়ে অতীতে যা হয়েছে, ভবিষ্যতে মানুষ সেটা দেখতে চায় না। প্রকল্পের নামে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়েছে। হাওরের মানুষের কোনো লাভ হয়নি। প্রকৃতি ও পরিবেশের উন্নয়ন হয়নি। সবাই মিলেই টাঙ্গুয়ার হাওরকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে এসেছেন।’

হাওরপারের ভান্ডারচাপুর গ্রামের বাসিন্দা গোলাম নূর জানান, তিনি হাওরে আইইউসিএনের সহব্যবস্থাপনা প্রকল্পে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। কিন্তু হাওরে সংকট রয়েই গেছে। প্রকল্পে কত টাকা ব্যয় ধরা ছিল, সেটি পর্যন্ত তাঁদের জানানো হয়নি। তিনি বলেন, এই হাওর রক্ষা করতে হবে। না হলে হাওরপারের মানুষই সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, হাওরের ওপর স্থানীয় মানুষজনের নির্ভরতা বেড়ে গেছে। এটি কমাতে হবে। তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। না হলে কোনো কিছুতেই কাজ হবে না। মানুষ মাছ ধরবে, গাছ কাটবে, পাখি মারবেই।

সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জেলার তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলায় এই হাওরের অবস্থান। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট (আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি)। এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট-বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখন হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে। হাওর এলাকায় ৮৮টি গ্রাম আছে।

১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করার পর ৭০ বছরের ইজারাদারির অবসান হয়। ২০০০ সালে এটি ‘রামসার সাইট’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ২০০১ সালে এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। এরপর জেলা প্রশাসন হাওরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

/এএম/
সম্পর্কিত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেটে ফেলা হলো অর্ধশতাধিক গাছ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ
যে কারণে মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না সরকার, জানালেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
২৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প১৩ বছরেও চালু করা যায়নি খুলনার নতুন কারাগার
সর্বশেষ খবর
৩ বছরের চুক্তিতে বাংলাদেশে আসছেন আম্পায়ার সাইমন টফেল
৩ বছরের চুক্তিতে বাংলাদেশে আসছেন আম্পায়ার সাইমন টফেল
আদালত চত্বরের নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী গঠনের প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল জারি
আদালত চত্বরের নিরাপত্তায় বিশেষ বাহিনী গঠনের প্রশ্নে হাইকোর্টের রুল জারি
ছাত্রদল নেতার হাতুড়ি পেটায় জাসদ কর্মী নিহত
ছাত্রদল নেতার হাতুড়ি পেটায় জাসদ কর্মী নিহত
মুল্ডারের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সামনে রানের পাহাড়
মুল্ডারের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সামনে রানের পাহাড়
সর্বাধিক পঠিত
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছাত্রী সাভারে উদ্ধার
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় রফতানি ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় রফতানি ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’
এনবিআর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে অর্থ উপদেষ্টা          ‘ইউ আর পেইড বাই দ্য গভর্নমেন্ট’