মিঠাপুকুরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

জাল ভোট দেওয়ায় আটক, এমপির ভাইকে ছেড়ে বাকি দুজনের কারাদণ্ড

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দেওয়ায় রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকারের ছোট ভাই জাহিদ হোসেন জাহিদসহ তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দুজনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে জাহিদকে চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল পৌনে ১০টার দিকে উপজেলার শঠিবাড়ি কলেজ ভোটকেন্দ্রে ঢুকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে সিল মারার সময় তাদের আটক করে পুলিশ। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন রুমান মিয়া (২৭) ও বাদশা মিয়া (২৮)। তারা শঠিবাড়ির দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিঠাপুকুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল পৌনে ১০টার দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুর (হেলিকপ্টার) পক্ষে জাল ভোট দিতে শঠিবাড়ি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন সাত-আট জন যুবক। এর মধ্যে একজন সংসদ সদস্য জাকির হোসেন সরকারের ছোট ভাই জাহিদ হোসেন। কেন্দ্রে ঢুকে জোরপূর্বক ব্যালট পেপারের একটি বান্ডিল কেড়ে নিয়ে হেলিকপ্টার প্রতীকে সিল মারতে থাকেন। বাধা দিলেও না মানায় পরে পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিশ এসে তিন জনকে আটক করলে বাকিরা পালিয়ে যান।

খবর পেয়ে সাংবাদিকরা ওই কেন্দ্রে যান। এ সময় দেখা যায়, রুমান ও বাদশা মিয়াকে একসঙ্গে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এমপির ছোট ভাইকে পাশের একটি চেয়ারে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তখন কোনও কথা বলতে রাজি হননি পুলিশ ও প্রিসাইডিং অফিসার।

দুপুর ১২টার দিকে ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমপির ভাই জাহিদসহ তিন জনকে আটক করা হয়েছে। তারা কেন্দ্রে ঢুকে জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবেন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।’ 

দুপুর ১টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে রুমান ও বাদশা মিয়াকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু হেনা সিদ্দিকী। তবে এমপির ভাইয়ের কোনও শাস্তি না হওয়ায় শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুজনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করে অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট। তবে এমপির ভাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে নাকি আটক রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’

জাহিদকে চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মিঠাপুকুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দণ্ডপ্রাপ্ত দুজন ভ্রাম্যমাণ আদালতে জাহিদের নাম বলেনি। জাল ভোট দিতে তাদের সহায়তা করেছে বলেও জানায়নি। এজন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মিঠাপুকুর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘এমপির ভাই হওয়ায় ওপরের সুপারিশে বেলা ২টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

মিঠাপুকুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুজ্জামান কামরু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোতাহার হোসেন মন্ডল মাওলা ও সাবেক এমপি শাহ সোলায়মান আলমের ছেলে সাদমান ইশরাক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জাহিদকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে কামরুজ্জামান কামরুর প্রতিদ্বন্দ্বী মোতাহার হোসেন মন্ডল মাওলা বলেন,‌ ‘তাকে চার ঘণ্টা বসিয়ে রেখে নাটক করেছে প্রশাসন। জাল ভোট দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরার পরও সাক্ষী নেই বলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাকির হোসেন সরকার। তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রার্থী হলেও দলীয় টিকিট পেতে ব্যর্থ হন। শেষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন উপজেলা আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম আহ্বায়ক। ৭ জানুয়ারি ১ লাখ ৯ হাজার ৭০৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রাশেক রহমান ৭৪ হাজার ৫৯০ ভোট পান।