ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে চলে সংসার, আছে সম্ভাবনাও

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের জনগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন। নিজের কোনও আবাদি জমি নেই। আছে ৪টি ঘোড়া। এর মধ্যে দুটি আবার অসুস্থ। বাকি দুই ঘোড়া দিয়ে চাষ করে দেন অন্যের জমি। চাষ হয় তুলনামূলক দ্রুত। এটি দিয়েই চলছে মতিনের সংসার।

আধুনিক চাষ পদ্ধতির যন্ত্রাংশকে পাশ কাটিয়ে ব্যতিক্রম এই হালচাষ শুরু করেছেন বছর চারেক আগে। বিঘাপ্রতি ৫০০ টাকা নিয়ে অন্যের জমি চাষ করে দেন তিনি। মতিনের ঘরসংসার আর চারটি ঘোড়ার ভরণপোষণ চলে এই হালচাষের আয় থেকেই। বাংলার চিরায়ত গরু-মহিষের হালচাষের চেয়ে ঘোড়া দিয়ে সময় লাগে তুলনামূলক কম। ফলে অর্থ উপার্জনও হয় দ্বিগুণ।

আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমি চার বছর আগে থেকে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ শুরু করি। ঘোড়া দ্রুত হাঁটে। তাই চাষও হয় দ্রুত। আমার চারটি ঘোড়ার মধ্যে দুটি বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। ওই দুটোকে নিয়ে বিপাকে আছি। সক্ষম দুটো দিয়ে চাষের টাকায় সংসার চালাচ্ছি।’

কৃষক ইমান আলী ভুট্টা, ধান, সবজি চাষ করেন। তার কিছু জমিতে হালচাষের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র যাওয়ার জায়গা নেই। গরু বা মহিষের হাল পাচ্ছিলেন না। তাই বাধ্য হয়ে ডাক পড়ে মতিনের ঘোড়ার। ইমান আলী বলেন, ‘প্রথমে বাধ্য হয়ে মতিনের ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করিয়ে নিই। গরুর তুলনায় জমি চাষ ভালো হয়েছে। এখন ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করিয়ে নিচ্ছি নিয়মিত।

পাটগ্রাম উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হারুন মিয়া বলেন, ‘আব্দুল মতিন নিজের জীবিকার প্রয়োজনে অন্যের জমিতে ঘোড়া দিয়ে চাষ বা মই দিচ্ছেন। তবে আমরা কৃষি বিভাগ কৃষকদের সব সময় আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে চাষাবাদের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি।’

দর্শনের শিক্ষক রায়হান শরীফ বলেন, ‘মানুষ তার প্রয়োজনে বারবার পেশা বদল করে। আব্দুল মতিনের বিষয়টিও তেমন। আমরা হাইব্রিড এবং কোম্পানিনির্ভর হচ্ছি। ঐতিহ্য এবং মুনাফা রক্ষা করাটা একটা চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ রক্ষা করে যদি মুনাফা অর্জন হয় তবে দুদিক থেকেই আমরা উপকৃত হতে পারি। যেকোনও বিকল্প চিন্তার জন্য বাজার বা অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করতে হবে। খামারও করা যাবে। উন্নত বিশ্বে ঘোড়ার খামারের প্রচলন আছে।’

ভেটেরিনারি কলেজের শিক্ষক ডা. বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘গরুর গড় আয়ুকাল ১৫-২০ বছর। ঘোড়ার ক্ষেত্রে সেটি ২৫- ৩০ বছর। গরুর চেয়ে ঘোড়ার রোগব্যাধি তুলনামূলক কম। ঘোড়ার খামার কেউ করলে সেটি করতে পারে। তবে গরু বা গরুর পণ্যের বাজার যতটা বড়, ঘোড়ার ক্ষেত্রে ততটা নয়। বাংলাদেশে বাজার সৃষ্টি হলেই ঘোড়া পালন লাভজনক ও সম্ভাবনাময় হতে পারে।’