সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিএনপির সদস্যসচিব

পেশায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। কিন্তু সরকারি চাকরিবিধির তোয়াক্কা না করে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। ঘটনা এতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ওই সরকারি শিক্ষককে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে। যা সরকারি চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

ওই শিক্ষকের নাম শামসুল আলম সরকার ওরফে মোস্তফা শামসুল (৫৪)। তিনি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের কালীবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব পদে দায়িত্ব নেওয়ায় তার নিজ দলসহ প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি স্থানীয়দের মাঝেও চলছে সমালোচনা।

সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর বিধি-২৫ (১) এ বলা হয়েছে, কোনও সরকারি কর্মচারী কোনও রাজনৈতিক দল বা তাদের অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে পারবেন না। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে যুক্ত হতে বা কোনও প্রকারে অংশগ্রহণ বা সহযোগিতা করতে পারবেন না। বিধি ২৫ (৩) এ বলা হয়েছে, কোনও সরকারি কর্মচারী আইন পরিষদ নির্বাচনে কোনও প্রকার প্রচারণা অথবা অন্য কোনোভাবে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব প্রয়োগ অথবা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৩০ এপ্রিল উমর মজিদ ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ অংশগ্রহণ নিষেধ থাকলেও শিক্ষক শামসুল আলম বিধি ভঙ্গ করে ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব হন। এ নিয়ে গত ১৮ মে আবু সাঈদ সরকার নামে আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। ডিপিইও স্বপন কুমার রায় চৌধুরী অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।

ডিপিও স্বপন কুমার বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের রাজনৈতিক দল কিংবা কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ওই শিক্ষককে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। ইউনিয়ন বিএনপির সদস্যসচিব পদে থাকার বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও তিনি রাজনৈতিক দলের পদ ছেড়ে না দিলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শামসুল আলম সরকার

তবে ডিপিইওর মৌখিক সতর্কবার্তার পরও ওই শিক্ষক দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন বলে ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি বিএনপির কমিটি থেকে পদত্যাগ না করে গত ২২ মে কমিটির পরিচিতি পর্বসহ পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য সভা আহ্বান করে তাতে অংশও নিয়েছেন। ইউনিয়ন বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অভিযোগকারী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আবু সাঈদ সরকার বলেন, ‘ওই শিক্ষক সরকারি চাকরি করে কীভাবে রাজনৈতিক দলের পদ বাগিয়ে নিতে পারেন? অর্থের বিনিময়ে পদ পেয়েছেন বলে স্থানীয় বিএনপিতে আলোচনা আছে। আমি লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনও ওই শিক্ষক দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন।’

এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনিছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিরোধী দলের সময় ওই শিক্ষক দলে ছিলেন। এক শিক্ষক দলের নেতা হয়েছেন, এটা নিয়া তো আপনাদের এতো নাড়ানাড়ির দরকার নাই। হইছে হইছে। আপনি যে বিধিমালার কথা বলতেছেন সেটা কমবেশি আমরাও জানি। তারপরও একটা লোককে পদ দেওয়া হইছে। এটা আমাদের নেতৃবৃন্দও জানেন। এখন তিনি চাকরি করবেন নাকি দলের পদে থাকবেন, সেটা তাকে জিজ্ঞাসা করেন।’

জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক শামসুল আলম সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি দলীয় পদ ছেড়ে দেবো। আর কোনও দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেবো না। এ নিয়ে ডিপিইও স্যারের সঙ্গেও আমার কথা হয়েছে।’