জামিনে মুুক্তি পেলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হক

‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা যাওয়া ছমেছ উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার (২২ জুন) বিকাল ৫টার দিকে তার জামিন মঞ্জুর করেন রংপুর মহানগর দায়রা জজ (ভারপ্রাপ্ত) মার্জিয়া ইসলাম। পরে সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। মাহমুদুল হকের আইনজীবী রোকনুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এর বিচারক মো. সোয়েবুর রহমানের আদালতে জামিন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে তিনি আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। পরবর্তীতে মাহমুদুল হকের আইনজীবীরা রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করলে বিচারক মার্জিয়া খাতুন শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ জুলাই হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে।

মাহমুদুল হকের আইনজীবী শামীম আল মামুন বলেন, ‘যে মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়েছে মামলার বাদী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি আসামিকেও চেনেন না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর যে শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেফতার করা জুলাই চেতনার পরিপন্থি। প্রথমে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত বক্তব্য শোনার পর পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন জানালে বিচারক আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আসামির জামিন মঞ্জুর করেন।’

মাহমুদুল হক কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী মাসুবা হাসান, ছেলে মাইমুন মিহরান, আইনজীবী শামীম মাল মামুন, রোকনুজ্জামান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক শাহরিয়ার তাদের সঙ্গে ছিলেন। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মাহমুদুল হককে নিয়ে যাওয়া হয়।

শামীম আল মামুন বলেন, মাহমুদুল হক অসুস্থ। দুপুরে জামিন আবেদন অসুস্থতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। জেলখানা কর্তৃপক্ষও তার অসুস্থতার বিষয়টি আদালতকে জানিয়েছে। তার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত জামিন দিয়েছেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকালে মাহমুদুল হককে রংপুর নগরের ধাপ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া এলাকার বাসা থেকে গ্রেফতার করে হাজিরহাট থানা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে ৩ জুন হাজিরহাট থানায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বেগম। মাহমুদুল হক ওই মামলার ৫৪ নম্বর আসামি।

এদিকে রবিবার বেলা ১১টার দিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ওই শিক্ষকের মুক্তির দাবিতে আদালতের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা মাহমুদুল হককে আজই মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে হাজিরহাট থানার ওসিসহ গ্রেফতারের নির্দেশদাতা পুলিশ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিকাল পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন।