জাতীয় নাগারিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম নতুন বাংলাদেশে আর চাঁদাবাজি হবে না। কিন্তু সব কিছুর পরিবর্তন হলেও চাঁদাবাজি-দখলদারি বন্ধ হয়নি। কারা এসব করছে দেশের মানুষ সবই জানে। আওয়ামী লীগের সব চাঁদাবাজি করে তো ভারতে পালিয়ে গেছে। আপনারা কোথায় পালাবেন? পালানোর পথও পাবেন না। কাজেই যারা চাঁদাবাজি দখলদারি করছেন, সিন্ডিকেট করছেন; আওয়ামী লীগ গেছে যে পথে আপনারাও যাবেন সেই পথে।’
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সন্ধ্যায় পঞ্চগড়ে জুলাই পদযাত্রা শেষে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের টুনিরহাট-পঞ্চগড় সড়কে পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি। জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির আয়োজনে পথসভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘পঞ্চগড়বাসীকে সাক্ষী রেখে বলছি, যেই প্রশাসন দিয়ে, পুলিশ দিয়ে মধ্যরাতের নির্বাচন হয়েছিল, আওয়ামী লীগের ডামি নির্বাচন হয়েছে; সেই প্রশাসন ও পুলিশকে সংস্কার না করা পর্যন্ত আমরা কোনও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে বলতে চাই, আপনারা যেমন টাইম-ফ্রেম করে নির্বাচন চাচ্ছেন; একইভাবে বিচার ও সংস্কারেরও টাইম-ফ্রেম ঠিক করে দিন।’
পথসভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা,
সভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আগে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন, পরে নির্বাচন। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নতুন সংবিধান ছাড়া কোনও নির্বাচনে অংশ নেবে না এনসিপি। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে জনগণকে আমাদের সঙ্গে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘পঞ্চগড়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন পঞ্চগড়ের নেতা সারজিস আলম। এখানে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সমস্যা, চা শ্রমিকদের মজুরি সমস্যা তুলে ধরেছেন। আমরা একটি নতুন রাজনীতির উদ্দেশ্যে আপনাদের কাছে এসেছি। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পরে রাজপথ থেকে সরে যাইনি। আমরা রাজপথে আছি। আপনাদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘পঞ্চগড়ের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ দ্বারা আমাদের সীমান্তবাসীদের নির্মমভাবে খুন করা হয়। এই সীমান্তে হত্যাকাণ্ড ৫০ বছরে কোনও সরকার বন্ধ করতে পারেনি। এখন আমরা দেখছি ভারত থেকে পুশ ইন করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এইটা হাসিনার বাংলাদেশ নয়, ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ। যদি পাঠাতে পারেন শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পাঠান। আমরা এই জুলাই অভ্যুত্থানে তাদের বিচারের আওতায় আনবো। পুশ ইন চলতে থাকলে আমরা কোনোভাবেই মেনে নেবো না। আমরা বাংলাদেশিরা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আছি। জুলাই গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে ছাত্র-জনতার যে জোয়ার শুরু হয়েছে, সেটি তেঁতুলিয়া থেকে শুরু করে টেকনাফ পর্যন্ত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।’
সভায় সারজিস আলম বলেন, ‘পঞ্চগড়ে কোনও মানুষ আহত হলে তাকে রংপুর বা অন্য জেলায় পাঠানো হয়। যেতে যেতে পথেই মারা যায়। পঞ্চগড়ের মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় অবহেলিত। কিছুদিন আগে এখানে পাথর উত্তোলন শুরু হলে চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। রাতের আঁধারে শত শত ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে পাথর-বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয়দের হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে। এসব কারা করছে আপনারা জানেন। পঞ্চগড়ের চিনিকল চালু হওয়ার কথা ছিল এই বছরেই। কিন্তু কাদের জন্য চালু হয়নি আপনারা জানেন। ২০২৬ সালেই আমরা পঞ্চগড় চিনিকল চালু চাই।’
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘পঞ্চগড়বাসীর সমস্যা ইনশাআল্লাহ এনসিপির হাত ধরেই সমাধান হবে। পঞ্চগড়বাসীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাস্থ্যসেবা সবই এনসিপির হাত ধরেই শুরু হবে। আপনাদের এলাকার কৃতিসন্তান সারজিস আলমের হাতকে শক্তিশালী করুন।’
এর আগে জেলার দেবীগঞ্জে এনসিপির উপজেলা অফিস উদ্বোধন করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। বিকালে পঞ্চগড় স্টেডিয়াম থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চৌরঙ্গী মোড়ে এসে শেষ হয়। এই পদযাত্রায় ব্যানার-ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সাধারণ মানুষজনও। রাতে পদযাত্রা সহকারে তেঁতুলিয়ার উদ্দেশে পঞ্চগড় ছেড়ে যান এনসিপির নেতাকর্মীরা। একই দিন দুপুরে নীলফামারীতে জুলাই পদযাত্রা শেষে দেবীগঞ্জ এবং বোদা উপজেলায় পথসভা করেন নাহিদ ইসলাম।