মনজিয়ারাই সিলেটে নিহত জঙ্গি ‘মর্জিনা’ কিনা নিশ্চিত নয় পরিবার

মনজিয়ারার জাতীয় পরিচয়পত্রচট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পুলিশের হাতে নিহত জঙ্গি জুবাইরা ইয়াসমিনের বোন মনজিয়ারা পারভিন ওরফে মনজিয়ারা বেগমই সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার জঙ্গি আস্তানায় নিহত ‘মর্জিনা’ কিনা তা নিশ্চিত হতে পারেনি তাদের পরিবার। পুড়ে যাওয়া লাশের ছবি দেখে বান্দরবান থেকে সিলেটে আসা মনজিয়ারার বাবা নুরুল ইসলাম ও বড় ভাই জিয়াবুল হক কিছুই বলতে পরেননি।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বুধবার সকালে ‘সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মনজিয়ারার বাবা ও ভাইকে পুলিশি পাহাড়ায় মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তারা আতিয়া মহলে নিহত নারীর ছবি দেখে নিশ্চিত হতে পারেননি সে মনজিয়ারা কিনা।’

মোগলাবাজার থানার ওসি খায়রুল ফজলও একই কথা নিশ্চিত করেন। মনজিয়ারার বাবা ও ভাইকে সিলেট ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে লাশ দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

এর আগে বুধবার (২৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মনজিয়ারার বাবা ও ভাই বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়ন থেকে সিলেটে এসে পৌঁছান। মনজিয়ারা পারভিনের পরিবার মঙ্গলবারই (২৮ মার্চ) সিলেটের উদ্দেশে রওনা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, মর্জিনাই বান্দরবানের মনজিয়ারা পারভিন কিনা এটা নিশ্চিত হতে মঙ্গলবার সকালে সিলেট পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বান্দরবান জেলা পুলিশকে বার্তা পাঠানো হয়। আর এ বার্তা পেয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশ মনজিয়ারা পারভিনের পরিবারের দুই সদস্যকে সিলেট পুলিশের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। সীতাকুণ্ডে এই পরিবারের আরেক সদস্য জহিরুল হক (জসিম) কেও জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

জাতীয় পরিচয়পত্রের সূত্রে বাংলা ট্রিবিউন জানতে পারে, মনজিয়ারা বেগমের জন্ম ১৯৯৩ সালের ৩ এপ্রিল। তার বাবার নাম নুরুল আমিন, মায়ের নাম সাবেকুর নাহার। তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ২৭৮ নং বাইশারী মৌজার অংশ ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যার পর সীতাকুণ্ড পৌরসভার আমিরাবাদ এলাকায় নামারবাজারে ‘সাধনকুটির’ নামের একটি বাড়ি থেকে জসিম ও আরজিনা নামের দুই জঙ্গিকে আটক করে পুলিশ। ওই নারীর গায়ে আত্মঘাতী হামলার ভেস্ট ছিল। সাধনকুটির থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সীতাকুণ্ডের প্রেমতলায় ‘ছায়ানীড়’ নামের বাড়িতে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোয়াত টিমের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘অপারেশন অ্যাসল্ট সিক্সটিন’। এতে নব্য জেএমবির এক নারীসহ তিন পুরুষ জঙ্গি নিহত হয়। সেখান থেকে পরে এক শিশুর মৃতদেহও উদ্ধার করা হয়। সেখানেও প্রচুর বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া যায়। ‘ছায়ানীড়’ বাড়িতে নিহত পাঁচজনের একজন ছিলেন জুবাইরা ইয়াসমিন, তার স্বামী কামাল হোসেন ও তাদের শিশু সন্তান।
নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুবাইরা ইয়াসমিন ও তার ভাই জহিরুল হক (জসিম) এর বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যৌথ খামারপাড়ায়। জুবাইরা ইয়াসমিনের স্বামী কামাল হোসেনের বাড়িও বাইশারীর যৌথ খামারপাড়ায়।
জুবাইরার  মা জান্নাত আরা জানান, তার আট ছেলে এবং চার মেয়ের মধ্যে তিনজনের কোনও হদিস নেই। মেয়ের জামাই মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রামে যায় এবং কিছুদিন পর ছেলে জহিরুল হকও তাদের সঙ্গে চলে যায়। জুবাইরার একটি ছেলে হলে সন্তানের দেখাশুনার কথা বলে তার আরেক মেয়ে মনজিআরাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। গত আট মাস ধরে তাদের কোনও খবর পান না বলেও জানান তিনি। তিনি আরও জানান জানান, কামাল ও জুবাইরা বেশ ধার্মিক ছিল।
/এফএস/

আরও পড়ুন-

ভোটের আগে কুমিল্লার জঙ্গি আস্তানায় কোনও অভিযান নয়: সিইসি

‘কুমিল্লার আস্তানায় বিস্ফোরক নিয়ে এক জঙ্গির অবস্থান’

‘আমি চলে গেছি আল্লাহর রাস্তায়, মাকে বইলেন আমাকে যেন ক্ষমা করে দেয়’

বড়হাটের জঙ্গি আস্তানায় পৌঁছেছে সোয়াত

মৌলভীবাজারের জঙ্গি আস্তানা সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেলো
‘আপনারা কি জঙ্গি, জিজ্ঞেস করতেই গ্রেনেড ছোড়ে’

মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানা: দুই বাড়ির মালিক সাইফুরের শ্যালক গ্রেফতার!

মৌলভীবাজারে দুই জঙ্গি আস্তানার কাছেই ১৪৪ ধারা জারি

যে পরিচয়ে নাসিরপুরে বাড়িটি ভাড়া নেয় জঙ্গিরা