অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গত একমাসে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের দেড় লাখ হেক্টর জমির কাঁচা ধান। ফলে হাওরবেস্টিত জনপদে দেখা দিয়েছে তীব্র অভাব। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিন লাখ কৃষক। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ৯ এপ্রিল থেকে সুনামগঞ্জে খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রির উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রতি কেজি চাল ১৫ টাকা ও আটা ১৭ টাকা দরে বিক্রি করে ডিলাররা। প্রতিদিন ৮৮ টন চাল, আটা জেলার ১১টি উপজেলার ৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিক্রয় করা হয়। বুধবার থেকে এই ওএমএস এর পরিমাণ দ্বিগুন করা হয়েছে। ফলে জেলার ১৬ হাজার ৮০০ হতদরিদ্র মানুষ ওএমএস এর চাল কিনতে পারছেন। কিন্তু ইউনিয়ন পর্যায়ে খোলাবাজারে চাল ও আটা বিক্রি না করায় গ্রামের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী এর সুফল পাচ্ছে না। ভোর থেকে গ্রামের লোকজন চাল নেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ালেও চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। হাওর পাড়ের অভাবী মানুষ চালের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন।
লক্ষণশ্রী ইউনিয়নের জানীগাঁও গ্রামের কফিল মিয়া বলেন, ‘গ্রাম থেকে ৪০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে সারাদিন বসে থেকে পাঁচ কেজি চাল আনতে হয়। অথচ ইউনিয়নে ওএমএস এর ডিলাররা যদি চাল বিক্রির অনুমতি পেতো তাহলে এ সমস্যায় পড়তে হতো না।’
মঞ্জিল হোসেন বলেন, ‘শহর থেকে চাল আনতে গেলে সারা দিন চলে যায়। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।আর বিকালে চাল পাওয়া যায়।’
সদর উপজেলার মোল্লাপাড়া ইউনিয়নের বেতগঞ্জ গ্রামের হামিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার যখন কৃষকদের সাহায্যই করতেছে তাহলে চালের জন্য শহরে আসতে হবে কেন? গ্রামেই ব্যবস্থা করে দিলে পারতো।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বোগলাখাড়া গ্রামের আলী হোসেন বলেন, ঝড়বৃষ্টির দিনে শহর থেকে চাল আনতে তাদের খুব কষ্ট হয়। গাড়ি ভাড়া আর হাতখরচ মিলে ১০০ টাকা খরচ হয়। চাল আনতে দুইদিন পরপর শহরে যেতে হয়।
ওএমএস ডিলার পংকজ চৌধুরী বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে চাল বিক্রির উদ্যোগ নিলে গ্রামের মানুষ শহরে এসে ভীড় করতো না। এখন চালের জন্য গ্রামের মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে।
ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলাররা চাল বিক্রি করলে গরিব অসহায় মানুষের উপকার হতো।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আব্দুর রউফ বলেন, আজ বৃহস্পতিবার থেকে খোলাবাজারে চাল বিক্রির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে খোলাবাজারে চাল বিক্রির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে ইউনিয়ন পর্যায়ে চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এদিকে, সুনামগঞ্জ পাউবোর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস জানান, আজ বেলা ১২টার পর থেকে শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফলে হাওর এলাকায় পানি বাড়ছে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত।
/বিএল/