আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সর্বস্ব হারিয়েছেন হাওর এলাকার কৃষকরা। বছরের চাহিদা মেটাতো যে বোরো ধান, তার পুরোটাই নষ্ট হওয়ায় তারা এখন দিশেহারা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাকালুকি হাওরের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষত্রিগ্রস্তই এখনও ত্রাণ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিয়নগুলোতে ২৪ হাজার ৮৭১টি পরিবার পুরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৯ হাজার ৭২৩টি পরিবার। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা এক লাখ ২১ হাজার ৬০৬ জন এবং আংশিক ক্ষতির শিকার দুই লাখ ৫৮ হাজার ৩৪৮ জন। সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৮৯১টি ও আংশিক পাঁচ হাজার ৯১০টি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮ হাজার ৮৯৮ হেক্টর জমির বোরো ফসল। মাছ মরেছে ২৫ মেট্রিক টন। তবে হাওরে হাঁস, ছাগল ও গরু মারা যাওয়ার পরিসংখ্যান এখনও নিরুপণ করা যায়নি।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মিন্টু চৌধুরী জানিয়েছেন, ফসল হারানো দুর্গত মানুষদের জন্য জিআর ২০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। আর নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জন্য বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে ৫০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ২৫ লাখ টাকা, এক হাজার বান্ডিল ঢেউটিন।
ভুকশিমইল এলাকায় উস্তার আলী ও রমজান আলী জানান, ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে তারা কোনও ত্রাণ না পেয়েই ঘরে ফেরেন। হাকালুকি হাওর পারের কৃষাণী রেনু বেগম বলেন, ‘২৫ কিয়ার ধান ডুবে গেছে। সরকার চাউল দিলে নেতা হকলে মারিয়া নেইন গিয়া। আমার ভাগে ইতা সাহায্য পড়ে না। এখন পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য তো দূরের কথা ত্রাণের চালও একমুঠো পাইনি।’
হাকালুকি হাওর এলাকার কৃষক রফিক উদ্দিন বলেন, ‘৪০ কিয়ার ধান ক্ষেত করছিলাম। সব শেষ হয়ে গেল। এখনও সরকারি সাহায্যতো দূরের কথা কেউই খরব নেয়নি।’ কৃষক হাবিবুর রহমানও বলেন, ‘অসহায় হয়ে গেছি। এখন পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাইছি না। লাইনে দাঁড়িয়ে চাল পাইছি না।’
বড়লেখা তালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ কান্তি দাস বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার হাকালুকি হাওরের কৃষকের মাঝে এক হাজার ৫৩৯ জনকে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সুজানগর ইউনিয়নে ৪৯১, বর্ণি ইউনিয়নে ৫৫০, তালিমপুর ৪৯৮ ও ১৩২জনকে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে।’
/এসএমএ/এমও/