জেলার বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলা প্রধানত হাওর ও বিল বেষ্টিত এলাকা। এখানকার মৎস্যজীবী সম্প্রদায়সহ স্থানীয় বাসিন্দারা হাওর-বিল থেকে মাছ ধরে বা কিনে এনে শুঁটকি উৎপাদন করেন। এই দুই উপজেলায় প্রায় দুই হাজার পরিবার এ পেশার সঙ্গে জড়িত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখন চলছে শুঁটকির ভরা মৌসুম। সারি সারি মাচায় মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। বানিয়াচং উপজেলা ভাটিপাড়া গ্রামের শুঁটকি উৎপাদনকারী প্রমিলা চৌধুরী জানান, হাওর, খাল, বিল থেকে মাছ সংগ্রহ করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর মাছগুলো কেটে লবণ মাখানো হয়। পরে মাচা বানিয়ে সেখানে শুকানো হয়। দুই তিন দিন ধরে শুকানোর পর শুঁটকি তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘এই শুঁটকি তৈরির আয় দিয়ে আমাদের সংসার চলে। পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছি। শুঁটকি উৎপাদন করে আমাদের ভালোই চলছে।’
শুঁটকি তৈরির এ কাজে উৎপাদনকারী পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও গ্রামের কর্মহীন পুরুষ, কিশোরী ও নারীরা কাজ করেন। জীবন জীবিকা চালানোর পাশাপাশি একটু বাড়তি আয়ের সুযোগ অনেকের পরিবারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে।
বানিয়াচং উপজেলার বাঘহাতা, গাজীপুর, শান্তিপুর, ভাটিপাড়া, সুনারু, নাগুরা ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাও, নোয়াগড়, বিরাট, কোদালিয়া, বদলপুর রয়েছে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের অসংখ্য ডাঙ্গা। ডাঙ্গায় দেশীয় প্রজাতির পুঁটি, চিংড়ী, কাকিয়া, শৌল, গজার, টাকি, বাইম, টেংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি তৈরি করা হয়। শুঁটকি উৎপাদনকারীরা জানান, ছোট সাইজের মাছের শুঁটকি প্রতি কেজি ৪০০-৫০০ টাকা এবং বড় মাছের শুঁটকি এক থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়।
একই গ্রামের বাসিন্দা রবিন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, ‘আগের মতো আর এখন মাছ পাওয়া যায় না। তবে যা পাই তাই দিয়ে শুঁটকি তৈরি করে জীবন চালাতে হয়। টাকার অভাবে অনেক সময় শুঁটকি তৈরির জন্য পর্যাপ্ত মাছ কেনা সম্ভব হয় না। শুঁটকি তৈরি করতে যদি সরকার আমাদের সুদমুক্ত ঋণ দিতো তাহলে আরও বেশি শুঁটকি উৎপাদন করা যেত।’
একই উপজেলার সুনারু গ্রামের বজন দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুঁটকি মজুদ রাখতে গুদামের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের এলাকায় স্থানীয়ভাবে কোনও গুদামঘর নেই যে কারণে আমরা শুঁটকির মজুদ করতে পারি না।’
সুনারু গ্রামের বৃন্দাবন দাস বলেন, ‘আমাদের শুঁটকি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয়। যে কারণে এর কদর বেশি থাকে। সম্পূর্ণ কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় হাওরের শুঁটকির চাহিদা বেশি। আমাদের জন্য যদি মৎস্য অধিদফতর থেকে কোনও ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাহলে শুঁটকি উৎপাদনকারীর সংখ্যা আরও বেড়ে যেতো।’
হবিগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসার শাহ এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হবিগঞ্জে বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। হবিগঞ্জের বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এখানকার শুঁটকি সারাদেশে বিক্রি করা হয়। বিদেশে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপেও এই শুঁটকি রফতানি করা হয়। প্রান্তিক চাষিদের মৎস্য অফিদফতরের পক্ষ থেকে শুধু কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। যে কোনও সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তবে ঋণের ব্যাপারে এখনও কোনও চিন্তা করা হয়নি।’