সিলেট শহরতলীর মালনীছড়া চা বাগানে সম্প্রতি বিলুপ্তপ্রায় চিতাবাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। এরপর বনবিভাগকে বিষয়টি জানানো হলেও তারা তা আমলে নেননি। পরে এক প্রকৃতিপ্রেমীর কাছে বনের ভেতরে একটি গরুর ক্ষত-বিক্ষত দেহ ও বাঘের পায়ের ছবি দেখে নড়ে চড়ে বসে বন বিভাগ। শিকারী প্রাণীটি চিতাবাঘ কিংবা অন্য কোনও হিংস্র জন্তু কিনা তা দেখতে চা বাগানের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে বসানো হয় ‘নাইট ভিশন’ পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা। এরপরও বাঘ কিংবা কোনও ধরনের হিংস্র প্রাণীর সন্ধান পায়নি বনবিভাগ। তবে বাগানের ভেতরে একাধিক জায়গায় বাঘের পায়ের ছাপ দেখে তারা নিশ্চিত হয়েছেন এটা চিতাবাঘের পায়ের ছাপ।
বুধবার (৭ মার্চ) ফেসবুকে মালনীছড়া চা বাগান সংলগ্ন বিমাবন্দর সড়কে বাঘ দেখা গেছে বলে একটি ছবি প্রকাশিত হয়। কিন্তু ওই ছবির সঙ্গে মালনী ছড়ার চিতাবাঘের কোনও সংশ্লিষ্টতা পায়নি বনবিভাগ। তাদের ধারণা, এটা ভারতের গুজরাটের একটি ছবি।
সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুনিরুল ইসলাম বলেন,‘ফেসবুকে আপলোড করা ছবিটি আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া। একটি পক্ষ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার জন্য ভারতে ভাইরাল হওয়া একটি ছবিকে সিলেটের বলে চালিয়ে দিয়েছে। এখানে যে পায়ের ছাপগুলো দেখা গেছে তা প্যানথ্যারা পারডুস ( চিতাবাঘের বৈজ্ঞানিক নাম) প্রজাতির কোনও প্রাণীর। পায়ের ছাপগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে এই ধারণা করা হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান,মালনীছড়ায় বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়ার পর আমরা নাইটভিশন পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম। বাঘ কিংবা কোনও ধরনের হিংস্র প্রাণী ক্যামেরায় ধরা পড়েনি। মালনীছড়ায় যে পায়ের ছাপগুলো পাওয়া গেছে তা চিতাবাঘের বলে আমরা প্রায় নিশ্চিত। ’
বনবিভাগ সূত্র জানায়,গত ২০ ফেব্রুয়ারি মালনীছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা প্রথম দফায় বাগানের ভেতরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান। এরপর আবার ২৮ ফেব্রুয়ারি বাগানের ভেতরে বাঘের পায়ের ছাপের সঙ্গে একটি গরুর ক্ষত-বিক্ষত দেহ দেখতে পেয়ে বনবিভাগকে জানালে বনবিভাগের একটি দল গত শুক্রবার (৩ মার্চ) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিশ্চিত হয় যে বাগানের ভেতরে একটি বাঘ চলাফেরা করেছে। এরপর ভেতরে বসানো হয় নাইটভিশনের পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা। এছাড়াও ক্যামেরার সামনে বাঘ কিংবা হিংস্র প্রাণীর আকর্ষণ বাড়াতে দেওয়া হয় শুঁটকি।
মালনীছড়া বাগানের ভেতরে প্রথমে পায়ের ছাপ ও গরুর ক্ষত-বিক্ষত দেহ দেখতে পান সিলেটের সাইক্লিং কমিউনিটির মডারেটর ও প্রকৃতিপ্রেমী আখতারুজ্জামান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান,বাগানের ভেতরে সাইকেল নিয়ে ঘুরতে গেলে ছোট ছোট পায়ের ছাপ দেখতে পাই। তখন মনে হয়েছিল সুন্দরবনে এরকম একটি বাঘের পায়ের ছাপ দেখেছিলাম। এরপর এ বিষয়টি বনবিভাগকে জানালে তারা আগ্রহ দেখাননি। পরে ছবি তুলে দেখালে তারা ঘটনাস্থলে আসেন।
আরও পড়ুন: তরুণ প্রজন্মকে সম্পদে পরিণত করতে চান কুড়িগ্রামের প্রথম নারী জেলা প্রশাসক