কুশিয়ারার ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে রাজনগরের ঐতিহ্যবাহী কালারবাজার

কুশিয়ারার ভাঙনে হুমকির মুখে কালারবাজারকুশিয়ারার ভাঙনে রাজনগরের শত বছরের পুরনো নলুয়ার মুখ (কালারবাজার) এর দুই শতাধিক দোকানপাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন।

রাজনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে আগত ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এই ভাঙন রোধ করতে পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

এক সময় নদীযোগে ঢাকা ও ভৈরব থেকে ওই বাজারে মালামাল সরবরাহ করা হতো। এখন নদীর অব্যাহত ভাঙনে ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন তাদের ব্যবসা বাণিজ্য। তবে পাইকারি বাঁশ বিক্রি, বেতের তৈরি গ্রাম বাংলার হরেক রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীসহ কৃষি ক্ষেতের লাঙল-জোয়ালসহ আরও হরেক রকম সামগ্রীর পৃথক হাটের জন্য বাজারটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার দুদিন বসে হাট। ১০০ বছর আগে বাজার সংলগ্ন ছিক্কাগাঁও গ্রামের প্রয়াত কালা মিয়ার দেয়া জমিতে স্থাপিত এই কালারবাজারের নদীর পাড়ে বসতো ধান-চালের পাইকারি হাট। সেই সময়ে উজান ও ভাটি অঞ্চলের শত শত কৃষক নৌকাযোগে এসে ধান-চাল বিক্রি করতেন।

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও পাশের মৌলভীবাজার থেকে আসা ক্রেতারা হাটবারে জড়ো হতেন সেখানে। সেই চেনা-জানা ধানের হাট নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে ধান চালের হাট।

প্রায় দুই যুগ সময়ে এই বাজার থেকে প্রায় দুই শতাধিক কাঁচা-পাকা দোকান ও বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে গেছে। মাটি ধসে নদীতে পড়ায় অনেক দোকানঘর প্রায় শূন্যে ঝুলে আছে।

এছাড়াও রাজনগর উপজেলার বকসিপুর, আমনপুর, যোগিকোনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর ও ফতেপুর ইউনিয়নের বেড়কুড়ি, শাহাপুর, জাহিদপুরসহ নদীসংলগ্ন আরও ৫/৬টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাজারের পূর্বপাশে ভাঙনরোধে বালু পাথরসহ কয়েকশ বস্তা দিয়ে নদী পাড় কার্পেটিং করলেও পরের বছর আবার ভাঙনের কবলে পড়ে এসব বস্তা নদীতে হারিয়ে যায়। এ বিষয়ে পাউবো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের বিষয়টি তারা যাচাই-বাছাই করেছেন। তবে বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে এখানে বড় আকারের বাজেট দিয়ে ব্লকের কাজ করাতে হবে।

নলুয়ারমুখ কালারবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল আলীম বলেন, ‘নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বাজারের এখন করুণ অবস্থা। ভাঙন কবলিত নদীর পাশে বাজারের ১০/১৫ টি ঘর ঝুলে রয়েছে।’ তিনি তখন আক্ষেপ করে বলেন, ‘প্রচুর লোক সমাগম হওয়া এই বাজার ভাঙনমুক্ত করা প্রয়োজন।’

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর কালারবাজার ভাঙন থেকে রক্ষা করতে হলে ব্লকের কাজ করতে হবে। কাজটি ব্যয়বহুল। কিন্তু এ জন্য আমাদের কোনও বরাদ্দ নেই। আমরা ব্লকের কাজের জন্য একটি প্রস্তাব হেড অফিসে পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে কাজটি করতে পারবো।’