ধারদেনা করে ধান ঘরে তুললেও উৎপাদনের খরচের তুলনায় ধানের দাম কম। প্রতি মণ ধান ছয়শ থেকে সাতশ টাকা দরে বিক্রি করছেন কৃষকেরা। চালের মিল মালিক ও ধান ব্যবসায়ীরা এসব ধান কিনে নিচ্ছে। তবে, সরকারিভাবে এখনও ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। এতে সুনামগঞ্জের কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মুস্তফা বলেন, ‘ধান সংগ্রহের চিঠি পেয়েছি। এই বছর সুনামগঞ্জ থেকে মোট ৬ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একজন কৃষক থেকে সর্বোচ্চ তিন মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে সরকার। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ২৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’ তিনি জানান, সরকার প্রতিকেজি ধান ২৬ টাকা ধরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। সে হিসাবে প্রতি মণ ধানের দাম পড়বে ১০৪০ টাকা। আগামী সপ্তাহ থেকে সরকার ধান সংগ্রহ শুরু করবে।
ইতোমধ্যে কৃষকেরা ১২ লাখ মে. টন ধান ক্ষেত থেকে ঘরে তুলেছেন বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা। তিনি জানান, খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হলে স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বাড়বে।
সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামের সড়কে ধান বিক্রি করছিলেন ধনপুর গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন। ধান কিনছিলেন স্বাধীন রায়। তিনি জানান, তারা এখন সর্বোচ্চ ছয়শ টাকা মণ দরে ধান কিনছেন। কিছুদিন মজুত রেখে ধানের দাম বাড়লে প্রতিমণ ধান তিন থেকে চারশত টাকা লাভে মধ্যনগর ধানের আড়তে বিক্রি করবেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জনারধন তালুকদার বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের উৎপাদনের খরচ হিসাব মিলছে না।’
মন্তু সরকার বলেন, ‘আমরা ধান লইয়া বাজারে গেলে যে দর ব্যবসায়ীরা কয় সে দরে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হই। কারণ, সংসারের খরচ মেটাতে ধান বিক্রি করতে হয়।’
ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রণজিত চৌধুরী রাজন বলেন, ‘হাওর এলাকায় দীর্ঘদিন পর বোরোর বাম্পার ফলনের পরও লাভের মুখ দেখছে না কৃষক। মৌসুমের শুরুতে সাংসারিক প্রয়োজন ও দেনার দায় শোধ করতে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছর বোরো মৌসুমে জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এতে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। এ ধান থেকে ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে।