লাউয়াছড়ার বনে গাছ চুরি থামছে না

চুরি করে কেটে ফেলা হচ্ছে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের গাছ মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বন থেকে প্রায় প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে সেগুন গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এসব গাছ চুরি থামছে না। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গাছ চুরি ঠেকাতে তারা কাজ করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুই মাসের ব্যবধানে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের গাড়িভাঙা ও লাউয়াছড়া বিট অফিস এলাকা থেকে বেশ কিছু পুরনো সেগুন গাছ কেটে পাচারের ঘটনা ঘটে। এছাড়া এ সময়ের মধ্যে লাউয়াছড়া উদ্যানের পার্শ্ববর্তী কালাছড়া ও বাঘমারা বিটের বাফার বাগানে আকাশমনিসহ ৬-৭টি মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যায় চোরচক্র।

এদিকে লাউয়াছড়া পুঞ্জি সংলগ্ন মাঠে আগর গাছ পাচারের উদ্দেশে কেটে খণ্ড করে চোরচক্র। এ সময় স্থানীয় লোকজন বাধা দিলে সশস্ত্র চোরের দলের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে পুঞ্জির খাসিয়া চৌকিদাররা গাছের খণ্ডাংশ উদ্ধার করে বিট অফিসে জমা দেয়। এ ঘটনায় পুঞ্জির লোকজন লাউয়াছড়া বিট কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে জানা যায়।

সর্বশেষ শনিবার (২৭ মে) ভোররাতে গাড়িভাঙা নামক স্থানে জলাটিলা সড়কের পাশে ৪ ফুট প্রস্থ ও ৩০ ফুট লম্বা সেগুন গাছ কেটে ফেলে চোরচক্রের সদস্যরা। এ সময় সেগুন গাছ সড়কের ওপরে পড়ে গেলে সড়কে ব্যারিকেড হয়ে যায়। এমন সময় বিজিবির গাড়ি এলে চোরচক্র গাছ না নিয়েই পালিয়ে যায়।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নতুন ও পুরনো মিলে বেশ কিছু গাছ চোরচক্র সক্রিয় রয়েছে। সময় ও পরিস্থিতি বুঝে চক্রগুলো সক্রিয় থাকে। আগে যারা গাছ কাটতো তারাই আবার বর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নতুন করে গড়ে ওঠা  কিছু চক্রও মাঠে সক্রিয় রয়েছে। গাছ কাটায় জড়িতরা এরই মধ্যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের জানকিছড়া, ছনখলার সেগুনবাগান ও সিএমসি অফিসের পাশের টিলায় সেগুন ও গামারি বাগানের মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে গেছে।

চুরি করে কেটে ফেলা হচ্ছে লাউয়াছড়া সংরক্ষিত বনের গাছ স্থানীয় খাসিয়ারা অভিযোগ করে জানান, বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন অজ্ঞাত কারণে এসব গাছ চোরচক্রের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তার উদাসীনতার কারণে এই উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে।

লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা যখনই গাছ চুরির খবর পাই, তখনই ব্যবস্থা নিই। টহলে ঘাটতি হলে অনেক সময় গাছ চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। তারপরও দু-একটি ঘটনা বিক্ষিপ্তভাবে ঘটতে পারে। তা ধরার মতো নয়। চারজন প্রহরী, ১ জন মালি ও ২ জন বুটম্যান নিয়ে সশস্ত্র গাছ চোরদের ঠেকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

খাসিয়াদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খাসিয়ারা আগে রাতে জিপ, অটোরিকশা ও প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে তাদের বাসায় যাওয়া আসা করতো। বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার ও নিরাপত্তার স্বার্থে গাড়ি নিয়ে তাদের চলাচল বন্ধ করায় আমাকে তারা অহেতুক দোষারোপ করছে।’

লাউয়াছড়া বন পাহারায় নিয়োজিত সিএমসির পেট্রোলিং টিম গাছ চুরির সঙ্গে জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আর কতো কইতাম! কারা এসব করে সবাই জানে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক দিন ধরে উদ্যানের গাছ চুরির সঙ্গে জড়িত কমলগঞ্জের কাটাবিল এলাকার আনসার আলী। এই আনসার গ্রুপ রাতের বেলায় গাছ চুরি করতে বনে প্রবেশ করে। আনসারের বিরুদ্ধে ৭টি বন মামলা রয়েছে। এছাড়া আরও অনেক গাছ চোরচক্র রয়েছে।’