মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

01উজানে ভারতে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় গত ৪৮ ঘণ্টায় মৌলভীবাজার জেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মনু নদীর পানি শহরের চাদঁনীঘাট কাছে বিপদ সীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার (১৭ জুন) রাত থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদী ও কুলাউড়া উপজেলার মনু নদী পানি কমতে শুরু করে। সোমবার সকাল থেকে বিভিন্ন সড়ক ও বাড়িঘর থেকে বন্যার পানি নেমে যেতে শুরু করেছে।’
ইতোমধ্যে শনিবার থেকে কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের পতনউষার ইউনিয়নে ও শরীফপুরে আটকা পড়া পানিবন্দি মানুষজনকে উদ্ধারে সেনাবাহিনীর কাজ শুরু হয়। শরীফপুর-শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়ক দেবে ভেঙে পড়া কালভার্টটি আরও কিছুটা দেবে যাওয়ায় শরীফপুরের লোকজনের চলাচলের জন্য সড়ক জনপথ বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।
রবিবার থেকে কমলগঞ্জের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমে যায়। একইভাবে শমশেরনগর-মৌলভীবাজার সড়ক থেকেও পানি নেমে যায়। পানি নেমে যাওয়ায় সকাল থেকে এ দুটি সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে শমশেরনগর-কুলাউড়া সড়কের শমশেরনগর বিমানবন্দর এলাকায় সড়কের ওপর এখনও তিন ফুট পরিমাণ পানি থাকায় এ পথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তাও আজ থেকে কমতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল শমশেরনগরের সতিঝিরগাঁও, মরাজানের পার, রাধানগর, মুন্সিবাজার ইউনিয়নের রুপশপুর, বনবিষ্ণুপুর ও পতনউষার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করে।
02এছাড়াও মৌলভীবাজার শহর ও শহরতলীর এবং বড়হাট এলাকায় সিলেট ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং মৌলভীবাজার রাজনগর ও কুলাউড়া সড়কের বন্যার পানি কিছুটা নেমে গেছে।
শনিবার সেনাবাহিনীর দুটি দল স্পিডবোট নিয়ে কুলাউড়ার শরীফপুরে ও হাজীপুর ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। রবিবার সেনাবাহিনীর একটি দল স্পিডবোট নিয়ে কমলগঞ্জের পতনউষারে হাওর এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার কাজ শুরু করে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘রবিবার রাত থেকে মনু ও ধলাই নদীর পানি কমে আসছে। সোমবার সকাল থেকে মনু নদীর পানি ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে রবিবার সকাল থেকে মনু নদীর পানি শহরের চাদঁনীঘাট কাছে বিপদসীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার ও বিকালে ১৩০ সেন্টিমিটার ও রাত ১১টার দিকে মনু নদীর পানি শহরের চাদঁনীঘাট কাছে ১২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার রাতে ছিলও বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার ওপরে। পানি এখন কমতে শুরু করেছে।’
এর আড়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘১৩ জুন থেকে জেলায় মনু ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট বন্যায় প্রতিরক্ষা বাঁধের ২৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এই জেলায় ৫০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ৫ হাজার ৩৯০ জনকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ’
এদিকে মৌলভীবাজার জেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সেখানে যান। সোমবার (১৮ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজার সার্কিট হাউজে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ত্রাণমন্ত্রী মতবিনিময় সভা শেষে পবন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন এবং দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ প্রদান করবেন।’