বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বেইলি ব্রিজ, মৌলভীবাজারে আমদানি-রফতানি বন্ধ

চাতলাপুর সড়ক কাজ চলছেবন্যার কারণে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন ভাঙা কালভার্টের ওপর স্থাপিত বেইলি ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে দীর্ঘ এক মাস ধরে এই জেলায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া জেলার শমশেরনগর-চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন সড়কের শরীফপুর ইউনিয়নের সঞ্জবপুর থেকে শুল্ক স্টেশন পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকায় ১৬টি স্থানের সড়ক ভেঙে যায়।
জানা গেছে, জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সংলগ্ন ভাঙা কালভার্টের ওপর সড়ক জনপথ বিভাগ একটি নতুন বেইলি ব্রিজ স্থাপনের ১৩ দিন পর ২৬ জুন থেকে এ ব্রিজ দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল শুরু করে। বন্যায় এ সড়কের ভাঙা ১৬টি স্থানে বালি ভরাট করে ইট সলিং শুরু হলেও এ পথে এখন ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
শমশেরনগর-চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন সড়কের শরীফপুর ইউনিয়নের সঞ্জবপুর থেকে শুল্ক স্টেশন এলাকার ১৬টি স্থানের মধ্যে ৮টি স্থানের সড়ক ভাঙন ছোট আকারের। আর বাকি ৮ স্থানের ভাঙন বড় আকারের। বড় আকারের ভাঙন সর্বনিম্ন ৩৫ ফুট থেকে ২০০ ফুট লম্বা।
কুলাউড়া শরীফপুর গ্রাম এলাকায় সড়কে ইট সলিং কাজের তদারককারী করছেন সড়ক জনপথ বিভাগের সহকারী তপন বিকাশ দেব। তিনি বলেন, ‘এবারের বন্যার পানির স্রোতে এ সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৬ কিলোমিটার এলাকায় ছোট বড় ১৬টি স্থানের ভাঙনের মধ্যে ইতোমধ্যে ৮টি স্থানে ইট সলিং সম্পন্ন হয়েছে আরও ৮টি স্থানের কাজ বাকি রয়েছে। এই কাজ শেষ করতে কমপক্ষে আরও ১৫/২০ দিন সময় লাগবে।’
শরীফপুর তেলিবিল ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক উন্নয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় সাব ঠিকাদার নাজিম উদ্দীন নাজির বলেন, ‘বৃষ্টিতে মাঝে মাঝে কাজে বিঘ্ন ঘটে। তবে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ইট সলিং সম্পন্ন করা যেত। এর আগে ২৬ জুন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সড়কের মাটি ড্রেসিং করে দেওয়ায় হালকা যানবাহন চলাচল করার কারণে এই ইউনিয়নের লোকজনের দুর্ভোগ কিছুটা কম।’
চাতলাপুর চেকপোস্টের অভিবাসন কর্মকর্তা (ইমিগ্রেশন) এসআই জামাল হোসেন বলেন, ‘ভাঙা কালভার্টের ওপর স্থাপিত বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচল শুরু করায় আর ভাঙা সড়ক এলাকার মাটি ড্রেসিং করে দেওয়ায় দুই দেশের মানুষ যাতায়াত করতে পারছেন।’
চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনের আমদানি-রফতানিকারক সাইফুর রহমান (রিমন) বলেন, ‘ভাঙা কালভার্টের ওপর বেইলি সেতু স্থাপিত হওয়ায় ও ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক এলাকায় ইট সলিং শুরু হওয়ায় হালকা যানবাহন চলাচল করছে। তবে বেইলি সেতু দিয়ে আমদানি-রফতানিবাহী ভারী যানবাহন চলাচল এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। ঠিক কবে আমদানি-রফতানি শুরু হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। সড়ক জনপথ বিভাগ ও শুল্ক বিভাগ নিশ্চয়তা না দেওয়া পর্যন্ত এ পথে আমদানি-রফতানি বন্ধ রাখা হচ্ছে।’
চাতলাপুর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা (কাস্টমস সুপারেনটেনডেন্ট) আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘এ সড়কে যেভাবে সংস্কার কাজ হচ্ছে তাতে হালকা যানবাহন চলাচল করছে। তবে রফতানি পণ্যবাহী যানবহান চলাচল করতে পারবে না।’
সড়ক জনপথের মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘ভাঙা কালভার্টের স্থানে স্থাপিত বেইলি সেতু দিয়ে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সঞ্জবপুর থেকে চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন ও চেকপোস্ট পর্যন্ত ক্ষত সড়কে ইটসলিং কাজ চলছে। এই মুহূর্তে পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। পুরো সড়ক উন্নয়নে প্রস্তাব গ্রহন করে দরপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। দরপত্র হলে দ্রুত সময়ে সড়কের বড় ধরনের সংস্কার কাজ শুরু হবে।’

এদিকে মৌলভীবাজার জেলার এলজিইডি সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মো. ইব্রাহিম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়ক ও জনপথের রাস্তা কম, আমাদের রাস্তা বেশি। মৌলভীবাজার জেলায় এলজিইডি ১৫০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা রয়েছে। তার মধ্যে বন্যায় ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫০ কিলোমিটার রাস্তা। যার মেরামত বাবদ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা।’
তিনি আরও বকুলাউড়া চাতলাপুর শরীফপুর রাস্তালেন, ‘এসেসমেন্ট চলছে, এখনও শেষ হয়নি। তবে খুব শিগগিরই এসব ভাঙা সড়কের মেরামতের কাজ শুরু হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৩ জুন বুধবার ভোর রাতে মনু নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে মনু সেতুর উত্তর দিকের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ২০০ গজ দূরত্বে একটি কালভার্ট প্রথমে দেবে যায়। পরে এ কালভার্টটি ভেঙে গেলে এ পথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাছাড়া শরীফপুর ইউনিয়নের আরও ৩টি স্থানে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে সঞ্জবপুর গ্রাম এলাকা থেকে চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন ও চেকপোস্ট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়কে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।