২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন কানাডিয়ান কোম্পানি নাইকো সুনামগঞ্জের ছাতক গ্যাসফিল্ডের টেংরাটিলা গ্যাসকূপে রিলিফ ওয়েল করতে গিয়ে ব্লো আউটের ঘটনায় দুই দফা আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় টেংরাটিলা, আজবপুর, গিরিশনগর, ইসলামপুর, ভুজনা, আলীপুর, শান্তিপুরসহ ১০টি গ্রামের মানুষ।
এতে তিন হাজার একর ফলের বাগান, শতাধিক পুকুরের মাছ, সবজি বাগান নষ্ট হয়ে যায়। গ্যাসফিল্ডের আশপাশের গ্রামবাসী শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, চর্মরোগ, আর্সেনিকসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে ভুগছেন। টিউবওয়েলের পানিতে মাত্রতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয়ের সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। টেংরাটিলা গ্রামে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ২১৬টি পরিবারে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের সরবরাহ করা হয়। এছাড়া সামর্থ্যবানরা ব্যক্তি উদ্যোগে গভীর নলকূপ স্থাপন করে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু হতদরিদ্র বৃহৎ জনগোষ্ঠী এ সুবিধার বাইরে রয়েছেন। এখনও গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় দু-একটি জলাশয়ে গ্যাস বের হচ্ছে।
গ্যাসফিল্ড সংলগ্ন আজবপুর গ্রামের আছমা আক্তার বলেন, তাদের বাড়ির টিউবওয়েলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক থাকায় পানি ব্যবহার করায় হাত খসখসে হয়ে গেছে, মাথার চুল পড়ে যায়। পানি দিয়ে কাপড়চোপর ধুলে রং বদলে যায়।
গিরিশনগর গ্রামের আর্সেনিকে আক্রান্ত মনির হোসেন বলেন, তিনি ১০/১২ বছর হলো আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে কোনও কাজকর্ম করতে পারেন না। বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করিয়েছেন কিন্তু ভালো হননি। একই গ্রামের ফয়জুনেচ্ছা বলেন, তিনি ৪/৫ বছর ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। সরকারিভাবে কোনও ওষুধপত্র পান না।
রোকেয়া আক্তার বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেটের পীড়ায় ভুগছেন।
হোসনে আরা বেগম বলেন, এলাকার বৌঝিয়েরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পানিতে ধোয়ামুছা ও রান্নাবান্নার কাজে পানি ব্যবহার করে তাদের মধ্যে রোগীর সংখ্যাটা বেশি হবে।
স্কুলছাত্র রকিুবুল হাসান দীপু বলেন,আর্সেনিক ও আয়রনের জন্য তারা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করতে পারছে না। তার কাজে কুয়ার পানি ব্যবহার করছেন। অনেক দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয়। এলাকার নারী ও পুরুষরা জানান অনিয়ন্ত্রিতভাবে গ্যাস বের হওয়ার ফলে তাদের কৃষি, মাছচাষ, স্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
টেংরাটিলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব রয়েছে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। অগ্নিকাণ্ডে পশুপাখিরও ক্ষতি সাধিত হয়। এখনও গ্যাসফিল্ডের আশপাশের এলাকায় কোনও গাছ জন্মায় না। কোনও গাছের চারা লাগানো হলে বছর খানেক জীবিত থাকে পরে আবার মরে যায়। এখানে কোন ফসল হয় না। অনিয়ন্ত্রিতভাবে গ্যাস উদগীরনের ফলে লোকজন অসুস্থ হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. বিষ্ণু প্রসাদ চন্দ বলেন, টেংরাটিলা গ্যাসফিল্ডে অনিয়ন্ত্রিতভাবে যে গ্যাস বের হচ্ছে এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবে গ্যাস বের হলে গ্যাসফিল্ড এলাকার মানুষের চোখে ঝাপসা দেখা,শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, অগ্নিকাণ্ডের পর সেখানে গ্যাস উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। বর্তমানে গ্যাসফিল্ড এলাকায় যেন কোনও ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে প্রশাসন।