ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নিখোঁজ বড়লেখার জুয়েল

নিখোঁজ জুয়েলউন্নত জীবনের আশায় ইতালি যেতে চেয়েছিলেন মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার জুয়েল আহমদ (২৩)। এ জন্য দালালকে বেশ মোটা অংকের টাকা দিয়ে প্রথমে লিবিয়াতে যান তিনি। সেখানে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও দালাল তাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইতালি নিয়ে যায়নি। শেষ পর্যন্ত অপর এক দালালের মাধ্যমে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার জন্য রওনা হন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সাগরের ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তরঙ্গ জুয়েলের সব স্বপ্ন-আশা নস্যাত করে দিয়েছে। পরিবারের দাবি সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন জুয়েল। তার নিখোঁজ হওয়ার খবরে পরিবারের অন্য সদস্যরা এখন শোক বিহ্বল ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জুয়েলের বাড়ি বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ছাতারখাই গ্রামে। তার বাবার নাম জামাল উদ্দিন বচর।

জুয়েলের পরিবারের সদস্যরা জানান, ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর থেকে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের ধারণা, ওই নৌকাডুবিতে জুয়েলও ছিলেন।

এদিকে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, নৌকাডুবিতে নিহতদের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি রয়েছেন। এর মধ্যে ১৯ জনই সিলেটের। তাদের সবার পরিচয় মিলেছে। আর উদ্ধার হওয়া বাকি ১৬ জনের মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশি। তবে এ দুই তালিকায় বড়লেখার জুয়েলের নাম পাওয়া যায়নি।

জুয়েলের বাবা জামাল উদ্দিন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ছেলে জুয়েলকে ইতালিতে নেওয়ার কথা বলে বিয়ানীবাজার উপজেলার দালাল বদরুল ইসলাম ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়। তারা প্রথমে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায়। কথা ছিল সেখান থেকে তাকে ইতালিতে পাঠানো হবে। কিন্তু দেড়বছরেও তারা আমার ছেলেকে ইতালিতে পাঠাতে পারেনি। লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় জুয়েলের এক বন্ধুর মাধ্যমে বিশ্বনাথ উপজেলার পারভেজ নামে আরেক দালালের সঙ্গে পরিচয় হয়। পারভেজ ইতালিতে থাকেন। সেও আমার ছেলেকে ইতালি নেওয়ার জন্য আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমি পারভেজের বাবা রফিক উদ্দিনের হাতে নগদ আড়াই লাখ টাকা তুলে দেই।

তিনি আরও জানান, ইতালিতে যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে যে নৌকাডুবি হয়েছে, সেখানে তার ছেলে জুয়েলও ছিল। আগেরদিন জুয়েল তাকে ফোন করে জানিয়েছিল, নৌকা করে সে ইতালির উদ্দেশে রওয়ানা করবে।

বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের (ইউপি) সদস্য কবির আহমদ বলেন, ছাতারখাই গ্রামের জামাল উদ্দিন বচরের ছেলে জুয়েল আহমদের কোনও খোঁজ মিলছে না। জুয়েল ওই নৌকায় ছিলেন বলে দাবি করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। আমরা বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জুয়েলের খোঁজ খবর নিয়ে তার তথ্য পেলে জানাবে।’

বড়লেখার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জুয়েলের খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না বলে শুনেছি।। সে নৌকাডুবিতে নাকি নিখোঁজ রয়েছে। আমরা তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’