একই গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি নূর ইসলাম বলেন, ‘কি দোষ ছিল তুহিনের? খুনিরা গলাকেটে হত্যা করেও ক্ষান্ত হয়নি, তার দুটি কান ও পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলেছে। এতেই বোঝা যায়, খুনিরা কত পৈশাচিক ও নির্দয়।’
আজিজুল হক নামের আরেক প্রবীণ জানান, গ্রামের ক্যাশিয়ার পদ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ আব্দুল বাছির ও আনোয়ার হোসেন নামের সাবেক এক ইউপি সদস্যের লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে মামলা মোকদ্দমাও চলমান রয়েছে। গ্রামের পঞ্চায়েতি বিল ও বিভিন্ন অর্থনৈতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই বিবাদ দুই দশক ধরে চলছিল। এতে উভয় পরিবারের লোকজন মামলার আসামি। কেউ-কেউ আবার জামিনে বের হয়ে এসেছেন। তবে সামাজিকভাবে এ বিরোধ নিষ্পত্তির পর কেন এ হত্যাকাণ্ড, সেটা জানি না।
গ্রাম্য বিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে একসময় বিরোধ ছিল। এখন নেই। আমি অসুস্থ। কয়েক দিন আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি। আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের লোকজনের করা অভিযোগ সত্য নয়।’
উল্লেখ্য, রবিবার (১৩ অক্টোবর) রাতে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে রাতের আঁধারে ঘর থেকে তুলে নিয়ে তুহিনকে (৫) গলাকেটে হত্যা করা হয়। তার লাশটি রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। রাজানগর ইউনিয়নের কাজাউড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সে গ্রামের আব্দুল বাছিরের ছেলে।
পুলিশের হাতে আটকের আগে তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির জানান, পনের দিন আগে তার এক কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে। রবিবার দিবাগত রাতের খাবার খেয়ে তিনি তুহিন ও তার ছোট ভাইকে নিয়ে ঘরের সামনের রুমে ও নবজাতককে নিয়ে মা পেছনের রুমে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে দেখতে পান তুহিন ঘরে নেই। পরে নতুন মসজিদের পাশে গাছের সঙ্গে তুহিনের লাশ পান।
আব্দুল বাছির বলেন, ‘গ্রামে একসময় দ্বন্দ্ব ছিল, এখন কারও সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই।’
কাউকে সন্দেহ করেন কিনা জানতে চাইলে আব্দুল বাছির বলেন, ‘আমি যা দেখিনি, তা কীভাবে বলবো।’
ঘটনাস্থলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ছোরা দুটিতে গ্রামের সুলেমান ও সালাতুলের নাম রয়েছে। যাদের সঙ্গে তুহিনের পরিবারের দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতকরা ঘুমন্ত অবস্থায় তুহিনকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে রাস্তায় হত্যা করে।
ভাইস চেয়ারম্যান মোহন চৌধুরী বলেন, ‘কোনোভাবে এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।’ পুলিশ সুপার (সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান জানান, তুহিনের পরিবারের ছয় জনকে দিরাই থানায় নিয়ে আসার পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরিবারের সদস্যদের এই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিহত তুহিনের বাবা, চাচা ও চাচাতো ভাইসহ পাঁচ জনকে মামলায় আসামি করা হবে। তাদের মধ্যে দুই জন কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করেন। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার অনেক ক্লু পাওয়া গেছে, তদন্তের স্বার্থে এখন বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আরও খবর...
তুহিন হত্যাকাণ্ডে পরিবারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে: সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার