‘বন্যায় ধান-সবজি দুটোই গেছে’

সজবি চাষের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করা হচ্ছে‘চার মাসের মধ্যে চারবার বীজ থেকে চারা তুলে ক্ষেতে লাগাই ছিলাম। চারবারই বানের পানিতে ডুবে নষ্ট হয়েছে। এখন ধার-দেনা করে আবার জমিতে সবজি লাগাইছি। গেলোবার এমন সময় ক্ষেত থেকে সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করছি। এবার চারা গাছে ফুল ধরছে ফল ধরেনি। বন্যার কারণে আমাদের ধান ও সবজি দুটোই নষ্ট হয়ে গেছে।’–এভাবেই বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের সোনারপাড়া গ্রামের সবজি চাষি সাফিয়া খাতুন বন্যার ক্ষয়ক্ষতির কথা বলছিলেন।

একই অবস্থা রোজিনা বেগম, রিনা বেগমের। তারা বলেন,  ‘হুনছি সরকার বীজ দিছে, কিন্তু কই দিছে, কারে দিছে, কে পাইছে আমরা কিছু জানি না। আমরা কিছুই পাই নাই। বাজার থাকি বেশি দাম দিয়া চারা বীজ কিনে সবজি ক্ষেত করতাছি।’

সজবি চাষের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করা হচ্ছে

সদর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জে  শিম, বরবটি, টমেটো, আলু, শসা, লাউ, চিচিঙ্গা, লাউপাতা, লালশাক, পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ শীতকালীন সবজির আবাদ হয়। গতবার এমন সময় চাষিরা সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারলেও এবার সবজি এখনও গাছেই রয়ে গেছে। জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে সবজি ক্ষেতগুলো অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এক সিজনের মধ্যে চারবার ক্ষেতে চারা রোপণ করতে হয়েছে তাদের।

হজরত আলী বলেন, ‘একবার না, দুইবার না চারবার বন্যায় আমরার ক্ষতি করছে। ক্ষেত লাগাইতে কামলা-মুনি, সার, কীটনাশক, বীজ, হাল ডাবল ডাবল করে লাগছে। ক্ষেত কইরা ভাত খাই এর লাগি পতিত রাখতাম পারি না। ঋণ কইরা আবার সবজি লাগাইছি। দেরিতে ফলন হবে বাজারে নায্য দাম মিলবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি।’

সজবি চাষের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করা হচ্ছে

হেলেনা বেগম বলেন, বন্যার কারণে চারা ও বীজের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। ৩০০ টাকার বীজ ৫০০ আর ৫০০ টাকার বীজ ৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।

মাঝেরটেক গ্রামের শেখ ফরিদ বলেন, এলাকায় বীজ ও চারা সংকট। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজরসহ বিভিন্ন জাতের সবজির চারা পাওয়া যায় না। এগুলো বাইরের জেলা থেকে বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে।  

চালবন গ্রামের আব্দুল হালিম বলেন, সরকার সীমিত আকারে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তাই কেউ বীজ পাইছে আর কেউ পায়নি।

গাছে ফুল এসেছে এখনও ফল আসেনি

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে কৃষি ঋণ বিতরণ করলে মানুষ কিছুটা রক্ষা পাবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে নগদ টাকার খুব অভাব। তাই মহাজনী ঋণ নিয়ে চাষিরা জমিতে সবজির চারা লাগাচ্ছেন। পরপর চার দফায় বন্যার কারণে সুনামগঞ্জে পিছিয়ে গেছে সবজির চাষ।

জনপ্রতিনিধি বলছেন, অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে সব চাষিকে কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় আনা যায়নি।

গাছে ফুল এসেছে এখনও ফল আসেনি

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলেছে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা তৈরিতে জনপ্রতিনিধিদের কোনও ভূমিকা নেই। এবছর সারা জেলায় ১১ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। অক্টোবরের শুরু থেকে মার্চ পর্যন্ত শীতকালীন সবজি লাগানো যায়। 
সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম বলেন, কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচিতে বরাদ্দের পরিমাণ কম থাকায় সবাইকে বীজ দেওয়া যায়নি। আমরা মাত্র ১০-১১ জন কৃষককে বীজ দিতে পেরেছি। অথচ সবাই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে কোনও স্বজনপ্রীতির ঘটনা ঘটেনি।

Sunam pic 01 (24)

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় একজন কৃষককে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, টমেটো, শসা, লাউ, শিম, মিষ্টি কুমড়া, গাজর, শালগম, লালশাক, পালং শাক, কলমি শাকসহ ১২ প্রজাতির ৩৫০ গ্রাম সবজির বীজ দেওয়া হয়েছে। 

বেগুনের চারা লাগানো হয়েছে ক্ষেতে
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১০০ কৃষকের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।