বিধিনিষেধ না মেনে তাহিরপুরে আসছেন পর্যটকরা

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সবকটি পর্যটন কেন্দ্রে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাইরের জেলার পর্যটকরা অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। প্রতিদিন টাঙ্গুয়ার হাওর, নীলাদ্রি লেক, ট্যাকেরঘাট, বারিক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাকমাছড়া, শিমুল বাগানসহ এখানকার বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ব্যাপক লোকসমাগম হচ্ছে। এতে করোনা সংক্রমণের হুমকিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।  

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেত্রকোনা, কলমাকান্দা, ধর্মপাশা, মোহনগঞ্জ, তাহিরপুর সদরের বিভিন্ন রুট দিয়ে সুসজ্জিত ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে প্রতিদিন বাইরের জেলা থেকে পর্যটকরা হাওর এলাকায় ঘুরতে আসেন। সম্প্রতি কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ ঠেকাতে উপজেলা প্রশাসন তাহিরপুরের সব পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের আগমন নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেক পর্যটন গ্রুপ পর্যটকদের এখানে পাঠাচ্ছেন। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন কিছু সংখ্যক অসাধু নৌযান মালিক। তারা হাওরের বিকল্প রুট ব্যবহার করে লুকিয়ে পর্যটকদের বিভিন্ন স্পটে নিয়ে যায় এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করে হাওরের বিভিন্ন এলাকায় অবাধে ঘুরে বেড়ায়। এর ফলে স্থানীয় নৌযানের চালকদের মাধ্যমে তাহিরপুরের পর্যটন কেন্দ্রের আশপাশের গ্রামে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

.উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামের খসরুল আলম বলেন, ‘এমন কোনও দিন নেই যে ১০-১৫টি পর্যটকবাহী নৌযান ওয়াচ টাওয়ারে এসে ভিড় করে না। পর্যটকরা হাওরে নেমে গোসল করেন। গ্রামের দোকানগুলোতে বিভিন্ন খাবারদাবার কেনেন।’ মান্দিয়াতা গ্রামের গোলাম নবী বলেন, ‘পর্যটকদের আসা কাগজে বন্ধ থাকলেও বাইরের জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন  হাওরে শত শত পর্যটক হাওরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। এভাবে চলতে থাকলে তাহিরপুরে করোনার বিস্তার লাভ করবে।’

ট্যাকেরঘাট এলাকার ইউনুস আলী বলেন, ‘প্রশাসনের নিষেধ অমান্য করে পর্যটকরা এসে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর ফলে সীমান্ত এলাকায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের এখানে বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে হাওরে ভ্রাম্যমাণ টহল পুলিশ দিতে হবে।’ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী গোলাম সারোয়ার লিটন বলেন, ‘তাহিরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের আসা নিষেধ থাকলেও নৌযান মালিক ও পর্যটক কেউ তা মানছেন না। তারা অবাধে আসা-যাওয়া করছেন ও বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটা রোধ করতে না পারলে তাহিরপুর সংক্রমণের হুমকির মুখে পড়বে।’

এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘করোনাকালে তাহিরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে কোনও পর্যটক আমরা আসতে দেবো না। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিষয়টি সর্বস্তরের মানুষকে জানানোর জন্য মাইকিং করা হয়েছে।’ তিনি বাইরের জেলা থেকে পর্যটকদের না আসার আহ্বান জানান।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবীর জানান, পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে উপজেলা প্রশাসন থেকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়। কোনও পর্যটকবাহী নৌযান যাতে না আসে সে ব্যাপারে প্রশাসন তৎপর রয়েছে।