গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণের মালামাল চুরি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত ইট, সিমেন্ট ও পানির পাম্প চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করা এ ঘটনায় নবীগঞ্জ থানায় মামলাও দায়ের করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহি উদ্দিন চুরির ঘটনা ও মামলার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য দুইটি কক্ষ, একটি বারান্দা ও একটি স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রথম ধাপে ১১০টি ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের বৈঠাখাল গ্রামের খাস জমিতে ৫৬টি ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, এসব ঘরের নির্মাণ কাজ চলাকালে কাজের দায়িত্বে থাকা সহযোগী রাজমিস্ত্রি মুজিবুর রহমান বৈঠাখাল গ্রামের ভূমিহীন পাড়ার লিলু মিয়া, সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোজাহিদসহ কয়েকজনের সহযোগিতায় গত ১২ জুলাই রাতের আঁধারে নির্মাণ কাজের ৫০ বস্তা সিমেন্ট, চার হাজার মাস্টার ইট ও একটি পানির পাম্প চুরি করে বিভিন্নস্থানে বিক্রি করে। বিষয়টি জানাজানি হলে নবীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। খবর পেয়ে ১৫ জুলাই বিকালে ইউএনও শেখ মহি উদ্দিনসহ একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চুরির ঘটনার সত্যতা পায়।

স্থানীয় আফিজ উদ্দিনের কাছে ২০ বস্তা সিমেন্ট বিক্রি করার সত্যতা পেলেও অপর ৩০ বস্তা সিমেন্ট ও চার হাজার ইটের কোনও হদিস পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর সহযোগী রাজমিস্ত্রি মুজিবুর রহমানকে ওই এলাকায় দেখা যায়নি।

এ ঘটনায় ১৬ জুলাই সকালে নবীগঞ্জ থানায় দুইজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়।

বৈঠাখাল গ্রামের আফিজ উদ্দিন বলেন, সিএনজিচালক মোজাহিদ ও রাজমিস্ত্রি মুজিবুর আমার কাছে ৩৫০ টাকা ধরে ২০ বস্তা সিমেন্ট ও কিছু ইট বিক্রি করেছে। এই সিমেন্ট ও ইট সরকারি কি-না আমার জানা নেই।

চুরি ঘটনায় অভিযুক্ত সিএনজিচালক মোজাহিদ মিয়া দাবি করেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।

অভিযুক্ত মিস্ত্রি মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন।

এ প্রসঙ্গে ঘর নির্মাণের মূল রাজমিস্ত্রি হুমায়ুন আহমেদ বলেন, বৈঠাখাল আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ইট, সিমেন্ট ও পানি উত্তোলনের মোটর চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে দুইজনকে আসামি করে আমি মামলা দায়ের করেছি।

মালামাল সরবরাহকারী আব্দুল আলীম জানান, কিছু সিমেন্ট ও ইট চুরি হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ছাদু মিয়া বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মাণ কাজ চলাকালে ইট, সিমেন্ট ও পানির পাম্প চুরির ঘটনায় রাজমিস্ত্রি হুমায়ুন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ইউএনও শেখ মহি উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চোরচক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতোপূর্বে আরও তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে চুরি ঘটনা ঘটেছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলার প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ডালিম আহমেদ বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পে চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।