বীজ ধান ও ডিজেলের দাম বাড়ায় ‘ক্ষতিতে পড়বেন’ হাওরের কৃষক

‘এবার হালি ধানের দাম বেশি। সরকার ডিজেলের দামও বাড়াইছে। গতবার থাকি এবার গিরস্তির খরচ বেশি হইবো। বৈশাখ মাসে ধানের দাম পাওয়া যায় না। কার্তিক মাসে গিরস্তির লাইগা ভারাল খালি কইরা ধান বিক্রি করছি। এভাবে চললে আগামীতে কেউ ক্ষেত-কৃষি করতো না।’ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার হাছনবসত গ্রামের মনির উদ্দিন এভাবে তার কষ্টের কথা বলেন।

একই গ্রামের আনফর আলী বলেন, ‘হাওরের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বোরো ধানের বীজতলা ও চারা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন সুনামগঞ্জের কৃষকরা। তবে গতবারের চেয়ে এবার বীজ ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। গেলবার ব্রি ২৮ জাতের বীজ ধানের চাষি পর্যায়ে মূল্য ছিল ৩৯০ টাকা আর এবার ৫০০ থেকে ৫৩০ টাকা। ব্রি ২৯ জাতের দাম ছিল ৩৮০ টাকা, এবার ৪৯০ থেকে ৫২০ টাকা।’

গুদাম শ্রমিক সফর উদ্দিন বলেন, ‘বোরো মৌসুমের শুরুতে শহরের মল্লিকপুর গুদাম এলাকার শ্রমিকরা ব্যস্ত বীজ ধানের ট্রাক লোড-আনলোড করতে। আর হাওর এলাকার কৃষকরা ব্যস্ত হাওরে বীজতলা তৈরি ও বীজ থেকে চারা উৎপাদনের কাজে। এ বছর জেলায় হাইব্রিড, স্থানীয় উফশী মিলে ১০ হাজার ৬১২ হেক্টর বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ২২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমি।’

অপরদিকে, কৃষি বিপণন অফিস জানায়, এবার হাইব্রিড, স্থানীয় উফশী মিলে চার হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন বীজ ধান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বোরো মৌসুমের শুরুতে দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, যশোর, কুমিল্লা, পাবনা ঠাকুরগাঁও, কিশোরগঞ্জ ও সিলেটের সরকারি বীজ প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা বীজ নিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুর এলাকায় আসছেন ট্রাক চালকরা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত বীজ ধান বড় ট্রাক থেকে ছোট ট্রাকের মাধ্যমে ২০২ জন ডিলারের মাধ্যমে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেওয়া হবে।

কৃষকরা জানান, দ্রুত হাওরের পানি কমায় বীজতলা তৈরির কাজে ব্যস্ত তারা। তবে এবার বীজ ধানের দাম বেশি হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

বীজ ডিলার সাহেদ আলী জানান, এখন বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে, তাই বীজ ধানের চাহিদা বেশি।

সুনামগঞ্জ বীজ বিপণন কেন্দ্রের উপ-সহকারী পরিচালক আমিনুর রহমান বলেন, ‘এখন বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে সারা জেলার ডিলারদের সুনামগঞ্জ থেকে বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ পর্যন্ত ১০১ জন ডিলার বীজ উত্তোলন করেছেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুল হাসান বলেন, ‘এত আগে বীজ ধান ফেললে কোল্ড ইনজুরির শিকার হতে পারে, তাই আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের এখন বীজতলায় বীজ ফেলতে নিষেধ করছি। আরও ১৫ দিন পর বীজ ফেলার আহ্বান জানিয়েছি। জেলায় তিন লাখ ৫০ হাজার ছোট বড় মাঝারি ও প্রান্তিক কৃষক রয়েছেন।’