প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পরিবেশ আইন অমান্য করে অর্ধশতাধিক কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করছে একাধিক চক্র। এসব মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার জায়গা, সরবরাহ করা হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। আইনে অপরাধ বলা হলেও ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে অন্তরালে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারায়) অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকার জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এ ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সৈয়দপুর, পারকুল, কুর্শি ইউনিয়নের বাজকাশারা, হৈবতপুর, সুলতানপুর, রতনপুর, কুর্শি, দেবপাড়া ইউনিয়নের রুস্তমপুর, বাশডর, বাউসা, রিফাতপুর, গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল, পানিউমদা ইউনিয়নের খাগাউড়াসহ অর্ধশতাধিক স্থান থেকে কৃষিজমিতে এক্সকাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে সরবরাহ হচ্ছে নিকটবর্তী ইটভাটায়। এ ছাড়া বাউসা ইউনিয়নের ভরপুর, বাউসা বাজার, ইউনিয়ন পরিষদের বিপরীত পাশের জায়গাসহ কোটি কোটি টাকার মূল্যের অসংখ্য জায়গা এসব মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।

পরিবেশ আইন অনুযায়ী কৃষিজমি ও টিলার মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এসব কাজে উপজেলা প্রশাসনের মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আশরাফুল নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ‘কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে অবগত করি কিন্তু প্রশাসন জমির মালিক ও ইটভাটার মালিকদের কাছে আমাদের নাম-ঠিকানা বলে দেয়। এর ফলে দোষী ব্যক্তিরা আমাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মাকসুদুল আলম বলেন, কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে নেওয়ার ফলে ফলন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে জমি চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহরীয়ার মুঠোফোনে বলেন, ‘অর্ধশতাধিক স্থান থেকে মাটি কাটার বিষয়ে আমরা অবগত নই। খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ প্রশাসন জড়িত থাকার বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।