কৃষিজমির মাটি কাটার মহোৎসব, ফসল উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা

মৌলভীবাজার সদরসহ সাত উপজেলার কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন সদর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, জুড়ি ও বড়লেখা এবং রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষিজমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন কৃষকরা। পাশাপাশি সদরের একাটুনা, আমতৈল, সরকার বাজার, মনুপাড় এলাকার মাটি কেটে বাসাবাড়ির ভিটে ভরাট করছেন প্রবাসীরা। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষিজমির ওপরের ভাগের মাটি কেটে ফেলায় জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে কমছে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহতের শঙ্কা রয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃষিজমির মালিকদের টাকার লোভ দেখিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় নিচ্ছেন। কেউ ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য মাটি নিচ্ছেন। যেন চলছে মাটি কাটার মহোৎসব। এতে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি খালে পরিণত হচ্ছে। দিনদুপুরে জমি থেকে মাটি কেটে তোলা হচ্ছে ট্রাকে। একে একে মাটিভর্তি ট্রাক চলে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। পাশাপাশি মাটিবোঝাই ট্রাক চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক।

মাটি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সড়কের পাশের ৩০ শতাংশ জমির মাটি ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত কিনছেন। একটু নিচু এলাকার মাটি চার-পাঁচ হাজার টাকায় কিনছেন। আবার কোনও কোনও জমির এক ট্রাক মাটি ১৫০০-২০০০ টাকায় কেনেন। 

সদরের কালাপুর গ্রামের শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘জমিতে ধান ভালো হয় না। তাই মাটি বিক্রি করেছি। একেক শতাংশ জমির মাটি বিক্রি করে পাঁচ-সাত হাজার টাকা পাবো।’ একই কথা জানালেন ওই এলাকার কৃষক রহিম মিয়া ও শরিফ মিয়া। তারাও একই দামে কৃষিজমির মাটি বিক্রি করেছেন।

দিনদুপুরে জমি থেকে মাটি কেটে তোলা হচ্ছে ট্রাকে

মাটি কেটে ফেলায় জমির জৈব উপাদান চলে যাচ্ছে বলে জানালেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির গভীরে। এলাকাভেদে জৈবিক প্রক্রিয়ায় টপ সয়েল তৈরিতে ১০ বছর সময় লাগে। মাটির এই অংশে ফসল বেড়ে ওঠার গুণাগুণ সুরক্ষিত থাকে। টপ সয়েল থেকে বীজ প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহণ করে। এ অংশ একবার কেটে নিলে জমির প্রাণ থাকে না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছি আমরা। অভিযান জোরদার করলে জমি রক্ষা পাবে।’ 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী আ স ম সালেহ সোহেল বলেন, ‘কৃষিজমির মাটি কাটা দ্রুত বন্ধ করা হোক। এটি পরিবেশ ও ফসলের জন্য হুমকি।’ 

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নদীর বালু ও কৃষিজমির মাটি কাটা বন্ধে অভিযান জোরদার করতে। মাটি কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’