পারিশ্রমিক ও খাবার না দেওয়ায় ঠিকাদারকে হত্যা করলেন দুই নির্মাণশ্রমিক

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় পারিশ্রমিক ও ঠিকমতো খাবার না দেওয়ায় ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম সাইফুলকে (২৮) হত্যা করেছেন দুই নির্মাণশ্রমিক। বিষয়টি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তারা।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলার মনসুরনগর ইউনিয়নের মালিকুনা গ্রাম থেকে সাইফুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই নুরুল ইসলাম সদর মডেল থানায় মামলা করলে দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন—উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের শ্যামরকোনা গ্রামের নির্মাণশ্রমিক আব্দুল মুমিন (২৩) ও জহির মিয়া (২১)। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা, লোহার রড, সাইফুলের ব্যবহৃত মোবাইল ও টাকা উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মনসুরনগর ইউনিয়নের মালিকুনা গ্রামের সুনু মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রিদের ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম সাইফুল এক বছর ধরে সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের সিকরাইল গ্রামের মাহিন আহমেদের বাড়ি নির্মাণের কাজ করছিলেন। নির্মাণকাজের জন্য কয়েকজন শ্রমিক নিয়েছিলেন। দেড় মাস আগে আব্দুল মুমিন ও জহির মিয়াকে কাজে নেন। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তারা একত্রে বাজার করে রান্না করে খাবার খান। ওই রাতেই সাইফুলকে হত্যা করে পালিয়ে যান দুই নির্মাণশ্রমিক।

শুক্রবার সকালে ঘরের কাজ দেখতে গিয়ে সাইফুলের লাশ দেখতে পান মাহিন আহমেদ। পুলিশকে খবর দিলে বিকালে লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নিহতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের প্রচুর আঘাত রয়েছে। খবর পেয়ে সদর সার্কেলের এএসপি আজমল হোসেনসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার সন্ধ্যায় লাশ দাফন করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত দুই নির্মাণশ্রমিক জানিয়েছেন, ঠিকাদার সাইফুল তাদের পারিশ্রমিক এবং খাবার ঠিকমতো দিতেন না। এ নিয়ে কয়েকবার তার সঙ্গে দুই শ্রমিকের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। একই বিষয় নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যান তারা। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিহত সিরাজুল ইসলাম সাইফুলের বাবা চুনু মিয়া বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার একসঙ্গে বাজার করে রাতে রান্না করে খেয়েছিল তারা। কিন্তু টাকা নিয়ে ঝগড়া হলে তারা কাজ বাদ দিতে পারতো। একসঙ্গে থাকার পর এই হত্যাকাণ্ড মেনে নেওয়া যায় না। হয়তো ভিন্ন কোনও কারণে আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তারা।’

মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পারিশ্রমিক ও খাবার ঠিকমতো না দেওয়ার জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’