সিলেটে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনা

পাশাপাশি চিরশায়িত তিন বন্ধু, আরেক জনের শবদাহ

মেহেদী হাসান, আলী হোসেন, জুবায়ের আহসান ও নেহাল পাল; একসঙ্গেই ছিল এই চার বন্ধুর চলাফেরা। এরমধ্যে তিন জনই জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। তাদের কারও কোনও পদ-পদবি না থাকলেও দলের হয়ে একই সঙ্গে মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যেতো তাদের। চার জনের বাড়িও ছিল পাশাপাশি। সবশেষ শুক্রবারও তারা একসঙ্গে জুবায়েরের কেনা নতুন প্রাইভেট কারে ঘুরতে যান। বন্ধু-স্বজনরা বলছেন, মৃত্যুও চার বন্ধুকে আলাদা করতে পারেনি। তাদের মধ্যে মুসলমান তিন জনকে সমাহিত করা হয়েছে পাশাপাশি কবরে। তাদের এমন মর্মান্তিকভাবে জীবনাবসান হবে, কেউই মানতে পারছেন না। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দিবাগত রাত দেড়টায় সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুরের ৪ নম্বর বাংলাবাজার রাংপানি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক থেকে পাশের একটি খাদে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়। শনিবার (২০ জানুয়ারি) বেলা ২টার দিকে তিন জনের জানাজা জৈন্তাপুর উপজেলার রাজবাড়ী মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাদের পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দাফন করা হয়েছে। অন্যদিকে বিকাল ৪টার দিকে বাড়ির পাশেই নেহাল পালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

নিহতরা হলেন, জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট লামাপাড়া গ্রামের জহুরুল মিয়ার ছেলে জুবায়ের আহসান (২৬), নিজপাট তোয়াসীহাটি গ্রামের রণদ্বীপ পালের ছেলে নেহাল পাল রিসব (২৫), নিজপাট পানিহারাহাটি গ্রামের আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হোসেন তমাল (২৪) ও নিজপাট জাঙ্গালহাটি গ্রামের হারুন মিয়ার ছেলে সুমন আহমদ (২৫) ৷

পারিবারিক সূত্র জানায়, মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হওয়া চার জনের মধ্যে তিন জন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে নেহাল পাল সিলেট সরকারি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে এবং মেহেদী হাসান ও আলী হোসেন জৈন্তাপুর ডিগ্রি কলেজে পড়তেন। এ ছাড়া জুবায়ের আহসান প্রায় এক বছর আগে বিয়ে করায় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। কয়েক মাস আগে জুবায়ের আহসান একটি প্রাইভেট কার কেনেন। ঘটনার দিন তারা চার বন্ধু মিলে জুবায়েরের কেনা প্রাইভেট কারে জৈন্তাপুর থেকে জাফলংয়ের উদ্দেশে ঘুরতে যান। সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বাংলাবাজার এলাকায় পৌঁছালে প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে উল্টে যায়। এ সময় প্রাইভেট কারের দরজা খুলে কেউ বের হতে পারেননি। প্রথমে স্থানীয় লোকজন প্রাইভেট কার থেকে তাদের উদ্ধার তৎপরতা চালান। পরে উদ্ধারকাজে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনায় নিহত মেহেদী হাসানের চাচা আবদুল হামিদ বলেন, ‘আমার ভাতিজা ছিল খুবই সহজ-সরল মানুষ। সে ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিল। তারা চার বন্ধু একইসঙ্গে চলাফেরা, ঘুরতে যাওয়া ও দলের প্রোগ্রামে একই সঙ্গে থাকতো। একই সঙ্গে তারা আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, তা স্বপ্নেও আমরা ভাবিনি।’

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেহালসহ অন্যদের দলের হয়ে কাজ করতে দেখেছি। সেই সঙ্গে দলের যেকোনও কর্মসূচিতে তারা সক্রিয় ছিল।’

সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের কোনও কমিটি নেই। আমরা কমিটি গঠনের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করে রেখেছি। ছাত্রলীগ কর্মী নেহাল, মেহেদী ও সুমন ছিল দলের নিবেদিত প্রাণ। সবসময় তাদের একসঙ্গে দেখেছি। কমিটিতে নেহাল গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। কিন্তু তারা যে এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, তা কখনও ভাবিনি।’

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মারা যাওয়া যুবকদের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’