টানা ২২ দিন আটকে রেখে তরুণীকে ‘ধর্ষণ’, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেফতার

সিলেটে কাজ দেওয়ার নামে ২২ দিন আটকে রেখে তরুণীকে (১৮) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আবদুস সালাম (৪০) নামের এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের মামলা হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যায় আসামিরা।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ভোরে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মামলার প্রধান আসামি আবদুস সালামকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন র‌্যাব-৯-এর অধিনায়ক মোমিনুল হক। তিনি জানান, মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারে র‌্যাবের গোয়েন্দা টিম কাজ করে যাচ্ছে।

আসামিরা হলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ও নগরের লালদীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা আবদুস সালাম (৪০), একই এলাকার আবদুল মনাফ (৩৮) এবং রেখা বেগম (৩০) নামের এক নারী। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও দুই তিন জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগী নগরের শেখঘাটের একটি কারখানায় কাজ করতেন এবং শহরের একটি এলাকায় বসবাস করতেন। অভিযুক্ত রেখা বেগম তার প্রতিবেশী। ভুক্তভোগীকে শহরের বাসায় রেখে গ্রামে বেড়াতে যান স্বজনরা। এ সময় তাকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুস সালামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন রেখা। গত ৭ জানুয়ারি রেখার মাধ্যমে তরুণীকে নিজের বাসায় নিয়ে যান সালাম। এরপর টানা ২২ দিন একটি কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।

এর মধ্যে তরুণীর মা-বাবা গ্রাম থেকে শহরে ফিরে আসেন। বাসায় মেয়েকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেন। থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যেতে চাইলে রেখা বেগম তাদের সালামের কাছে নিয়ে যান। সালাম তাদের জিডি করতে নিষেধ করে নিজেই খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এর দু-তিন দিন পর তরুণীর মা-বাবা আবারও সালামের কাছে গেলে বিকালের দিকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান।

ওই দিন বিকালে তরুণীকে মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সালাম জানান, এক প্রবাসীর বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই উদ্ধার করেছেন। স্বজনরা প্রবাসীর নাম জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। একপর্যায়ে তরুণী মা-বাবাকে ধর্ষণের ঘটনাটি জানালে সালাম তাদের হত্যার হুমকি দেন এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন।

এজাহারে বাদী আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার তিন দিন পর আবার কাজে যাচ্ছিলেন তরুণী। তখন সালাম বিয়ে ও ভালো জায়গায় কাজ দেওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন। কথামতো সালামের সঙ্গে আবার দেখা করেন। তিনি তরুণীকে কিছু টাকা দিয়ে নগরের কাজীর বাজার এলাকায় এক বন্ধুর বাসায় পাঠান। সেখান থেকে অভিযুক্ত মনাফ তাকে হবিগঞ্জের বাহুবলে এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে আটকে রেখে সালাম-মনাফসহ একাধিক ব্যক্তি তাকে ধর্ষণ করেন। একপর্যায়ে তরুণী কৌশলে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিলেটে পালিয়ে আসেন। স্বজনরা তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। চিকিৎসা শেষে তরুণীর মা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।